ঝিনাইদহে ১৬৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
জেলার ১৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। সরকারি তহবিলের অভাব ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনার কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি পেলেও ইতিহাস ও এর গুরুত্ব সর্ম্পকে ধারণা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
শহীদ মিনার না থাকা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই নিজেদের উদ্যোগে কলা গাছ, বাঁশ, কাঠ ও কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এছাড়া জেলা ও উপজেলা সদরের কিছু প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি পালিত হলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬টি উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি মোট ৪৭২টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৯টিতেই শহীদ মিনার নেই।
সুত্র জানায়, সদর উপজেলার ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টিতে, মহেশপুর উপজেলার ৮১টির মধ্যে ২০টিতে, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪১টির মধ্যে ১৪টিতে, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮৩টির মধ্যে ৪০টিতে, হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৬২টির মধ্যে ২০টিতে এবং শৈলকুপা উপজেলায় ৮৮টির মধ্যে ৪৫টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই।
সুত্র আরও জানায় ঝিনাইদহ পৌরসভার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়, ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান মহাবিদ্যালয়ে এ শহীদ মিনার নেই।
জেলায় শহীদ মিনার নির্মাণে সবচেয়ে উপেক্ষিত মাদ্রাসাগুলোতে ১১২টি মাদ্রাসার মধ্যে শুধু মাত্র ২২টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার আছে অথচ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ রয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মকবুল হোসেন জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের উদ্যোগে মাতৃভাষা দিবসসহ জাতীয় দিবস গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। সেখানে কেবল শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিলেও দূরত্বের কারণে গ্রামের শিক্ষার্থীদের আসা সম্ভব হয় না। ফলে তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব সর্ম্পকে ধারণা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এ জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার স্থাপন করা জরুরি।
জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বাবলু বলেন, এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কার্যকরি ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষা বিভাগের যথাযথ ভূমিকা না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত দ্রুত সম্ভব শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শহীদ মিনার না থাকার কারণে গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই বন্ধ থাকে, ফলে নীরবে নিভৃতেই পেরিয়ে যায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ একটি মহান দিন।
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন জানান, শহীদ মিনার নির্মাণে সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া আছে। সরকারি অনুদানের অজুহাত দেখিয়ে অনেকেই এখনো নির্মাণ করেনি, তবে বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। সরকারের আর্থিক অনুদান পেলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
বিএ/এমএস