তদন্ত কমিটি দেখে বদলে গেছে ওসমানী হাসপাতাল


প্রকাশিত: ১১:০৪ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশুসহ ৩৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর পাল্টে গেছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত দলের পরিদর্শন উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকেই হাসপাতালটিতে রোগীদের বিশেষ আন্তরিকতার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যা দেখে অনেক রোগী ও স্বজনরা অবাকই হচ্ছেন। কারণ, শিশু মৃত্যুর ঘটনার আগে এরকম সেবা তারা পাননি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত দল সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত দল হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডসহ গরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা পরিদর্শন ও বৈঠক করেন। একই সঙ্গে ওসমানী মেডিকেলের কর্তৃপক্ষও তাদের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত দলকে তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করছেন।

প্রথমে তদন্ত দল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিয়ার সাথে বৈঠক করেন। দুপুর ১টার দিকে তারা হাসপাতালের ২১, ২২ ও ২৩ নং শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ( বিকেল সাড়ে ৩ টা) তদন্ত দল হাসপাতালেই অবস্থান করছেন। তারা শিশু মৃত্যুর ঘটনাসহ নানা দিক খতিয়ে দেখছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার সকাল থেকেই হাসপাতালে সময় মেনে ডাক্তার-সেবীকারা এসে হাজির হয়েছেন। হাসপাতালের কর্মকর্তারা যার যার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজে লেগে গেছেন। ক্লিনারররা প্রতিটি ওয়ার্ড ধুয়েমুছে রেখেছেন। খাবার বন্টনকারীরা রোগীদের সুষ্ঠুভাবে খাবার দিয়েছেন। অন্যদিনের চেয়ে সকালে একটু ভালোমানের নাস্তা করেছেন রোগীরা। দুপুরে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে গরম গরম ভাত-তরকারি দেওয়া হয়েছে রোগীদের। তবে , হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও কমে এসেছে।
৫ম তলার ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গবারের চেয়ে এই ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। আগে যেখানে গাদাগাদি ছিল, আজ অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা। কারণ, আতঙ্কিত রোগীদের নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়েছেন মঙ্গলবার দিন থেকে গভীররাত পর্যন্ত।

২২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি এক শিশু রোগীর মা বললেন, চার দিন হল আমরা এখানে। পাশের কেবিনে দুজন শিশু মারা গেছিল। তাই অনেক রোগী ভয়ে ছাড়পত্র না নিয়েই চলে গেছে। আমরাও যাইতে চাইছিলাম, যাইনি। কারণ, সকাল থেকে ভালো সেবা পাচ্ছিলাম।
শিশু ওয়ার্ডের একাধিক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্যদিন স্বাভাবিক ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হতো। কিন্তু, দামি ইনজেকশন, এন্টিবায়োটিক এগুলো স্লিপে লিখে দিলে বাইরে থেকে কিনে আনতে হতো। এখন বদলে গেছে দৃশ্যপট। হাসপাতালেই দামি সব ওষুধ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুর নানি মৃদু হেসে বললেন, বাবা, চাইর দিন আগে ৫ টেকা দামের একটা সিরিঞ্জ ও বাইরে থাকি কিইন্না আনসি, অখন ফাইলে ওষুধ লেখে, আবার তারাই ওষুধ আইন্না দেয়। অলা যদি ইকানতাত সব সময় চলতো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালের ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেয় একটি চক্র। হাসপাতালের প্রভাবশালি কয়েকজন ডাক্তার এই চক্রের সঙ্গে সমৃক্ত। হাসপাতালের ওষুধ বাইরে বিক্রি হচ্ছে। আর রোগীদের নিম্নমানের ওষুধ লিখে দিচ্ছেন ডাক্তাররা। এই লিখে দেওয়ার মাঝেও ডাক্তাররা পান কমিশন, গিফট। আর রোগীর স্বজনরা দালালচক্রের মাধ্যমে হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসি থেকে গিয়ে কিনে আনেন নিম্নমানের অখ্যাত ব্রান্ডের ওষুধ।

এই সব ওষুধ থেকেও রোগীদের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন স্বজনরা। এছাড়াও হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের আচরণের ওপর স্বজনদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সঠিক তদন্তে  সিলেট বিভাগের এই সবচেয়ে বৃহৎ সরকারি হাসপাতালটির সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও অভিভাবকরা।
ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এম এ সালাম বলেন, মন্ত্রণালয় ও হাসপাতাল গঠিত দুটি কমিটিই একসাথে হাসপাতালের নানা বিষয় খতিয়ে দেখছেন। ২৩ জনের মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ বলেই ধরা হচ্ছে। তবে, এক সঙ্গে শিশু ওয়ার্ডের ১০ শিশুর মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি আরও গভীরে কোনো কারণ আছে কি না, তা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিশুসহ ৩২ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ৭দিন পরে এই ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।