কুমারখালির মানুষের ভাগ্য বদলাচ্ছে একতারা


প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

একতারাটা হাতে লইয়া হব বইরাগি, তোমারো লাগি- এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে একতারা নিয়ে। এখনো এমন অনেক গান রয়েছে যা একতারা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। এই বাদ্যযন্ত্রটির সুরের মূর্ছনায় আজও যেন পাওয়া যায় মাটির ঘ্রাণ। আর এই বাদ্যযন্ত্রকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার ছেউড়িয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প।

এলাকার শত শত যুবক একতারা তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর কারিগরদের তৈরি এই একতারা শুধু কুষ্টিয়া জেলায় নয়, ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। আধুনিক প্রযুক্তির অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের মাঝে যে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রটি এখনো আদি ও অকৃত্রিমভাবে টিকে আছে সেটি হলো একতারা। আর কুষ্টিয়ায় ফকির লালন শাহের মাজারকে কেন্দ্র করে এই একতারায় পেয়েছে ভিন্ন রূপ। একতারা বানানোর কাজ করে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে শত শত নারী-পুরুষ। উপজেলার ছেউড়িয়া, বিশ্বাসপাড়া, মন্ডলপাড়া, জয়নাবাদ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এই কাজ করে হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল। তবে, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে এই বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে লাভ কিছুটা কম হচ্ছে বলে জানালেন কারুশিল্পীরা।

এদিকে, বিক্রেতারা জানান, দিনদিন বাড়ছে একতারার চাহিদা। সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকার সামাদ শেখ ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বিভিন্ন আকৃতির চামড়া কাটছেন। পাশে বসে ছোট ছেলে ইমরান শেখ ও ছেলের স্ত্রী নূরজাহান খাতুন একতারায় রং দিচ্ছেন। পাঁচজন শ্রমিক একতারায় নকশা, বাঁশের ছোর, কান ও মুঠো তৈরিতে ব্যস্ত। শহরের গড়াই নদীর পারে আদর্শপাড়ার শর্তবর্ষী শেখ সামাদ আলী স্বাধীনতার পর থেকে একতারা তৈরি করে আসছেন। একই কাজ করে সামাদ আলীর তিন ছেলে আমজাদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও ইমরান শেখ জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের তৈরি একতারা আর কাঠে খোদাই করা লালনের প্রতিচ্ছবি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। একতারা তৈরির মূল উপাদান বাঁশ, কাঠ আর চামড়া। তবে লাউয়ের বশ ও নারকেলের মালায়ও একতারা তৈরি হয়। মুলি বাঁশ মূলত পাশের জেলা ঝিনাইদহ, যশোর থেকে সংগ্রহ করা হয়। লাউয়ের বশ স্থানীয় কৃষকদের থেকে ও চামড়া কেনা হয় নাটোর থেকে এমনটিই জানালেন সামাদ শেখ। তিনি বাড়িতেই ছোটখাটো একটি কুটিরশিল্প গড়ে তুলেছেন। নাম দিয়েছেন কর্মরত কারুশিল্প। তার প্রতিষ্ঠানে আরও ১০ জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ি, বাটাল, কাঁচি দিয়ে কাজ করছেন তারা। এখানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ একতারা তৈরি করা হয়। সাত-আট রকমের একতারার দাম ৪০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। তবে বায়না করে আরও সুন্দর করতে চাইলে দামটা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, একতারা তৈরিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ সংগ্রহ করে আত্মমকর্মসংস্থান তৈরির জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

এমএএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।