বীরবলকে জব্দ করতে সম্রাটের তিন প্রশ্ন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

একদিন সম্রাট আকবরের মাথায় তিনটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। তিনি কিছুতেই সেই প্রশ্নগুলোর সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি সভাসদদের মাঝে বললেন, যে আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পাড়বে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। প্রশ্নগুলো হলো-

১. এমন কি জিনিস আছে যেটি বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে?
২. এমন কি আছে যেটি বর্তমানেও নেই, আর ভবিষ্যতেও থাকবে না?
৩. এমন কি জিনিস আছে, যেটি বর্তমানে থাকলেও ভবিষ্যতে থাকবে না?

এরপর তিনি বললেন- শুধু উত্তর দিলেই হবে না, উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ উদাহরণও দিতে হবে। উপস্থিত সবাই চিন্তায় ,মগ্ন হয়ে গেলো। কারও মুখ থেকে কোনো উত্তর বের হচ্ছে না দেখে বীরবল বলে উঠলেন- হুজুর আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমি দিতে পাড়ব। কিন্তু তার জন্য আপনাকে আমার সঙ্গে আপনার রাজ্য ঘুরতে হবে, তাহলে আপনি যথাযথ উদাহরণের সঙ্গেই আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।

এরপর সম্রাট আকবর ও বীরবল সুফির ছন্দবেশ ধারণ করে, বেড়িয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তারা বাজারে পৌঁছে গেলেন। এরপর তারা একটি দোকানে ঢুকে পড়লেন। এরপর বীরবল দোকানীকে বললেন- আমরা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি মাদ্রাসা তৈরি করতে চাই, এরজন্য আপনাকে এক হাজার টাকা দিতে হবে।

এটি শুনে দোকানি তার হিসাব রক্ষককে একহাজার টাকা দিতে বললেন। এবার বীরবল বললেন- আমি যখন টাকা নিব, তখন আমি আপনার মাথায় জুতোর বারি মারব। প্রত্যেকটা টাকার জন্য একটা করে বারি আপনার মাথায় আমি মারব, রাজী থাকলে বলেন।

এই কথাটি শোনার পর, দোকানের এক কর্মচারী দারুণ রেগে গেলো, সে বীরবলকে মারতে উদ্যত হল, কিন্তু দোকানের মালিক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, হ্যাঁ আমি তৈরি, কিন্তু আমার একটি শর্ত আছে আপনাকে, আমাকে বিশ্বাস জোগাতে হবে যে, আমার দেওয়া টাকা মাদ্রাসা তৈরির কাজেই লাগানো হবে, অন্য কোথাও ব্যয় করা হবে না।

এই কথাটি বলে, দোকানের মালিক মাথা নিচু করে বললেন, জুতো মারা শুরু করুন। এটি দেখার পর বীরবল দোকানিকে কিছু না বলেই, সম্রাট আকবরকে নিয়ে দোকানের বাইরে চলে এলেন।

এরপর তারা চুপচাপ রাস্তা দিয়ে আবার হাঁটতে লাগলেন। এবার বীরবল বলতে শুরু করলেন- সম্রাট, দোকানে যা কিছু হয়ে গেল তার মানে দাঁড়ায় যে, দোকানদারের কাছে আজ টাকা আছে, আর সেই টাকাকে সে মহৎ কাজে ব্যয় করতে চায়, যাতে ভবিষ্যতেও তার নাম থেকে যায়।

সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায়- নিজের মহৎ কাজের মাধ্যমে মানুষ স্বর্গে নিজের জায়গা করে নিতে চায়। অর্থাৎ আপনি বলতে পাড়েন যে, তার কাছে আজ যা আছে, ভবিষ্যতেও তা থাকবে। আর এটিই হল আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর।

এরপর তারা হাঁটতে হাঁটতে একজন ভিক্ষুকের কাছে যায়। তারা দেখল যে, একজন মানুষ সেই ভিক্ষুককে কিছু খাবার দিচ্ছেন, আর সেই খাবারটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এরপর বীরবল সেই ভিখারিটির কাছে গিয়ে বললেন- আমার অনেক খিদে লেগেছে, আমাকেও কিছু খাবার দিন।

এই কথাটি শোনার পর সেই ভিক্ষুক খুব রেগে গেলেন এবং বললেন- পালা এখান থেকে, কি জানি কোথা থেকে এসে জোটে এরা।

এরপর সম্রাট ও বীরবল কিছু না বলে এগিয়ে চললেন। যেতে যেতে বীরবল বললেন- হুজুর এখন যে ঘটনাটি ঘটল সেটি হল আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর। এই ভিক্ষুকটি নিজেকে ঈশ্বরের সেবক মনে করেন, অথচ তিনি সাধারণ মানুষকেই খুশি করতে পারেন না। ঈশ্বরকে কী খুশি করবেন? এর মানে দাঁড়ায় যেটি আজ তার কাছে আছে, সেটি ভবিষ্যতে আর তার কাছে থাকবে না।

এরপর তারা আরও এগিয়ে যেতে লাগলেন। দেখলেন, একজন তপস্বী গাছের নীচে বসে তপস্যা করছেন। বীরবল সেই তপস্বীর কাছে গিয়ে, তার সামনে কিছু অর্থ রেখে দিলেন। এটি দেখে তপস্বীটি বললেন- এগুলোকে শিগগিরই এখান থেকে সরাও। এই টাকা গুলো নিলে বেইমানী হবে, আর বেইমানী করা টাকা আমার চাই না।

হুজুর এটি হলো আপনার পরের প্রশ্নের উত্তর, এর মানে হলো এখন তার কাছে কিছুই নেই, কিন্তু সে কিছু অর্জনের চেষ্টা করছে। তাই বর্তমানে তার কাছে সুখ নেই ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে তার কাছে অনেক সুখ থাকবে।

প্রশ্নের এমন উত্তর পেয়ে সম্রাট আকবর বেজায় খুশি হলেন। এরপর আকবর ও বীরবল রাজমহলের দিকে পা বাড়ালেন।

লেখা: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।