আজকের জোকস : হাসি যে আর ধরে না
হাসি যে আর ধরে না
গোপাল গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আজ দেব, কাল দেব বলে সে টাকা আর শোধ করতে পারেনি। সেই লোক গোপালকে একদিন হাটের মধ্যে পাকড়াও করে বলল-
মহাজন : আমার টাকাগুলো দিয়ে দাও তো গোপাল, নইলে আজ আর তোমায় ছাড়ব না। তোমাকে এত লোকের সামনে অপমান করব, দেখি তুমি কোথা যাও বাছাধন।
মহাজনের দ্বারা অপমানিত হয়ে গোপাল বলল-
গোপাল : টাকা কি দেব না বলছি? আপনার টাকা আগামীকালই দিয়ে দেবো। পরশু সকালেই আমার বাড়িতে চলে আসুন। আমি টাকা শোধ করে দেব পরশুর মধ্যে। সামান্য টাকার জন্য এত অপমান করার আপনার দরকার ছিল না। আমি টাকা যেমন করে পারি, পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবই।
গোপালের কথা শুনে মহাজন মনে মনে ভাবলেন গোপাল যখন এত লোকের সামনে কথা দিল তখন পরশুদিন যেভাবেই হোক টাকা পরিশোধ করবেই। এই ভেবে পরশু মহাজন গোপালের বাড়িতে গিয়ে হাজির হল।
মহাজন : কই হে গোপাল টাকা দেবে বলেছিলে দাও, আমি ঠিক সময় মত এসেছি।
মহাজনের ডাক শুনে গোপাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে বলল-
গোপাল : কাকভোরে ছুটে এসেছেন, দয়াকরে বাড়ির দাওয়ায় একটু বিশ্রাম করুন- আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আপনার টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করছি। আপনি কষ্ট করে এসেছেন প্রাণের টানে তাতেই আমি কৃতার্থ। আমার বাড়ি আজ পবিত্র হল। মহাজন তো এখনই টাকা পাবে মনে মনে ভেবে নিশ্চিত হয়ে গোপালের বাড়ির দাওয়ায় বসে হাটু দোলাতে থাকল।
কিছুক্ষণ পরে গোপাল আর গোপালের বড় ছেলে সামনের খোলামেলা বেশ বড় বাগানে পাঁচ হাত অন্তর বেশ কয়েকটি নারকেল চারা পুঁততে লাগল মনোযোগ সহকারে। তা দেখে মহাজন গোপালকে অস্থির হয়ে বলল-
মহাজন : এ কি করছ গোপাল? আমার যে বেলা হয়ে যাচ্ছে। কাজকর্ম আছে যে। গদিতে যেতে হবে, সকালে উঠেই এসেছি জলখাবারও খাওয়া হয়নি। বাড়িতে লোকজন আসবে, শীঘ্র কর।
গোপাল নারকেলের চারা পুঁততে পুঁততে বলল-
গোপাল : দেখছেন তো চারা পুঁতছি। একটু বসুন না। এখনি হয়ে যাবে পোঁতা। আপনার টাকার ব্যবস্থা করে তবে আজ জলগ্রহণ করবো বলছি। এই দেখুন। করছি কিনা? আপনি আর একটু বসে নিজে দেখুন। আপনি অপেক্ষা করুন, হলো বলে। বিশ্বাস না হয় উঠে এসে দেখুন।
কাজ শেষ করে গোপাল কাছে এসে দাঁড়াতেই মহাজন জিজ্ঞেস করল-
মহাজন : সেই থেকে তো বসিয়ে রেখেছো- একটা তামাকও দিলে না, যাক কই টাকা দাও। আমার তাড়া আছে।
গোপাল মুচকি হেসে বলল-
গোপাল : এতক্ষণ ধরে তো আপনার টাকা শোধের ব্যবস্থাই করলুম মশায়।
মহাজন : তার মানে তুমি তো এখন নারকেলের চারা পুঁতলে। আমার টাকার ব্যবস্থা করলে কী করে?
গোপাল : এই যে নারকেলের চারা পুঁতলাম তাতে নারকেল গাছ হবে এবং এতগুলো নাকেল গাছে যা ফল হবে তা তো আর কম নয়। দু’বছরের নারকেলের টাকায় আপনার সব দায়-দেনা শোধ হয়ে যাবেই। আপনাকে যখন কথা দিয়েছি আজই টাকা শোধের ব্যবস্থা করব, তাই ব্যবস্থা করে দিলাম। দু’বছরের জন্য নারকেলের ইজারাও আপনাকে দিয়ে এলাম। আর ভাবছেন কেন, ধরুন আপনার টাকা বলতে গেলে নিশ্চিন্তে পেয়েই গেলেন সুদ সমেত।
গোপালের কথা শুনে পাওনাদার হাসবে না কাঁদবে ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত বেচারা হেসেই ফেলল। গোপাল বলল, ‘এখন কিনা টাকাটা নগদ পেয়ে গেলেন বলে হাসি আর ধরে না যে দাদার।’
এসইউ/পিআর