শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের মজার ঘটনা: পণ্ডিত প্রেস

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৭ পিএম, ২২ মার্চ ২০২২

দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্ৰ পণ্ডিত জঙ্গিপুর সংবাদ ও বিদূষক নামে দুটি সাময়িকপত্ৰ সম্পাদনা করতেন। তার নিজের ছাপাখানা ছিল। তার নাম পণ্ডিত প্রেস। নিজের প্রেস সম্পর্কে দাদাঠাকুর বলতেন, আমার ছাপাখানা হালফ্যাশানি ছাপাখানা নয়।

আমার ছাপাখানায় আমিই প্রোপাইটার, আমি কম্বোজিটার, আমি প্রািফরিডার, আমিই ইস্ক ম্যান। কেবল প্রেসম্যান আমি নই। সেটি ম্যান নয়, উওম্যান, অর্থাৎ আমার অর্ধাঙ্গিনী।

ছাপানোর কাজে ব্ৰাহ্মানী আমাকে সাহায্য করেন। ঘরের মাঝে আমার টাইপ রাখার কেস। মাটির মেঝেতে ঠিক কাঠের কেসের মতোই সারিসারি গর্তকরে সাজিয়ে, সেই সব ফোঁকরে এক একটি ছোট ছোট মাটির ভাঁড় বসিয়ে তার মধ্যে টাইপ রেখেছি।

পরবর্তীতে তিনি উন্নত ধরনের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। একবার একটু পুরোনো অথচ পত্রিকা ছাপার উপযুক্ত একটি মেশিনের সন্ধানে দাদাঠাকুর কলকাতায় আসেন। মেশিন খুঁজতে খুঁজতে তিনি একটি কোম্পানীর অফিসে ঢুকে পড়েন। দেখেন, কর্মকর্তাটি এক সাহেব।

দাদাঠাকুর তাকে সাহেবি কেতা মতো গুডমর্নিং বলে সম্বোধন করেন। দাদাঠাকুরের পরণে ধুতি, খালি গা, খালি পা, কেঁচার কাপড় কোমরে বেড় দিয়ে জড়িয়ে বাঁধা, এক হাতে টিনের চোঙার মতো একটা বাক্স, অন্য হাতে একটি কলিকাশীর্ষ হুক্কা, বগলে ছাতা।

এমন লোকের মুখে গুডমর্নিং শুনে সাহেব অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন, আর ইউ কামিং ফ্রম এ জঙ্গল? (অর্থাৎ, তুমি কি জঙ্গল থেকে আসছ?)

দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্ৰ পণ্ডিতের রসিকতা তো আর সাহেব জানেন না। রসিকতা করেই দাদাঠাকুর সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে বললেন, ইউ আর রাইট, আই অ্যাম কামিং ফ্রম এ জঙ্গল। (আপনি ঠিক বলেছেন, আমি একটি জঙ্গল থেকে আসছি। )

গ্রামের মানুষের মুখে ইংরেজি শুনে অবাক সাহেব জানতে চাইলেন, তুমি কী করো?

দাদাঠাকুর বললেন, আমি একখানা জংলী কাগজের জংলী এডিটর। দাদাঠাকুরের কথায় চমৎকৃত হয়ে সাহেব একশ টাকা দিয়ে তাকে একটি ছাপাখানা কিনে দিলেন। দাদাঠাকুর তার বিদূষক পত্রিকার মলাটে লিখতেন–

ধামাধারা উদারপন্থী দলের সাপ্তাহিক মুখপত্ৰ। নিজেকে সম্পাদক পরিচয় না দিয়ে লিখতেন, সেবাইত-শ্ৰীশরৎচন্দ্ৰ পণ্ডিত।

মুর্শিদাবাদের জেমোকান্দীতে একটি অনুষ্ঠানে দাদাঠাকুরের সঙ্গে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দেখা হয়। শাস্ত্রীমশাই দাদাঠাকুর সম্পর্কে পরে লেখেন, জেমোকান্দীতে একজন লোকের সঙ্গে দেখা হইল। তাহার নাম সোজাসুজি শরৎ পণ্ডিত-বিদূষকের এডিটর, তিনি মুখে মুখে পদ্য লেখেন, তার কাগজও পদ্যে। ইনি খুব তেজস্বী ব্ৰাহ্মণ, বেশ মিষ্টি করিয়া সকলকে হক কথা শুনাইয়া দেন। বেচারার জাঁকজমক কিছুই নাই-সদানন্দ পুরুষ।

শাস্ত্রীমশাই আরও বলেন, তিনি একাধারে এডিটর, প্ৰফরিভার, কম্পোজিটার, ডেসপ্যাচার-তিনি কেবল সাবসক্রাইবার নিন। সেকালে ভাঁড়ের কথা শুনেছিলাম, তিনি সেই ভাঁড়।

দাদাঠাকুর পরে কলকাতায় এলেও তার জন্মস্থান মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর শহরের থেকে এক মাইল দূরের সেই অজ পাড়াগাঁকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভুলতে পারেন নি। তার জন্ম ১৩ বৈশাখ, ১২৮৮। দাদাঠাকুরের একটি বিখ্যাত ছড়া বেটা বেচা।

ছড়াটা হলো- জাত বুঝি যায় নাকো কুভোজ্য ভোজনে। / পুরাইছ পোড়া পেট বেটা বেচে ওজনে। / ছেলের বিবাহ দিয়ে নিয়ে যাবে কন্যায়। / তার সনে টাকা চাও এটা তবে কোন ন্যায়! / গহনা করিছ। দাবী নগদ চাহিয়া ঢের। /বেচিলে বেটার মাংস কত টাকা প্ৰতি সের? / হওনা বামুন তুমি কায়েত কি বৈদ্য। / অধম কশাই চেয়ে মশাই যে সদ্য।

লেখা: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।