অলক্ষুণে বণিকের মুখ দেখে সম্রাটের যা হলো

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২২

সম্রাটের রাজধানীর কাছেই সুখচাঁদ নামে এক বণিক বাস করত। সকালে ঘুম থেকে উঠে যে প্রথমে এই বণিকের মুখ দর্শন করত, তার নাকি সারাদিন আর অন্ন জুটত না। এমনটাই প্রবাদ প্রচলিত ছিল। কথাটা সম্রাটের কানে এল।

সম্রাট ভাবলেন, আজব কথা তো। বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখবেন বলে ঠিক করলেন। তাই একদিন ধরে এনে প্রাসাদে বন্দি করে রাখা হলো সেই বণিকটিকে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সম্রাট প্রথমেই সুখচাঁদকেই দেখলেন। তারপর তাকে মুক্ত করার আদেশ দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলেন, দেখা যাক আজ কী হয়।

যথারীতি প্রাতঃকৃত্য শেষে সম্রাট খেতে যাবেন। এমন সময় বাঁদী এসে খবর দিল বেগমের ভয়ানক মাথা ধরেছে। সম্রাটকে অতি শিগগির যেতে হবে। খাওয়া দাওয়া ফেলে ছুটলেন সম্রাট। বদ্যি ডেকে আনা হলো কিছুক্ষণ পর বেগম সুস্থ হয়ে উঠলেন।

ওদিকে সম্রাটের সকালের খাবার সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। ফলে আবার তা গরম করার ব্যবস্থা করতে হলো। কিন্তু খাওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাবার অনেক পরেও না খাওয়ার জন্য সম্রাটের পেটে ব্যথা শুরু হলো। ব্যথা তো ব্যথা, সম্রাটের অবস্থা একেবারে কাহিল। আবার বদ্যি এলেন। সম্রাটকে পরীক্ষা করে বললেন, আজ আর কিছু না খাওয়াই সম্রাটের জন্যে ভালো হবে।

ব্যথায় অস্থির সম্রাট বললেন, সে কি বদ্যি, সকালেও তো কিছু খাইনি। বদ্যি বললেন, তবুও আজ না খাওয়াই ভালো। কিন্তু সকালে খাননি কেন? তাহলে তো ওষুধ দিতে হবে, বলে সম্রাটকে ওষুধ খাইয়ে দিলেন বদ্যি। খানিক পরে ব্যথা কমে গেল। ব্যথা কমতেই সম্রাটের মনে পড়ল সুখচাঁদের কথা।

মেজাজ তার গরম হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে ওই নচ্ছার বণিকের মুখ দেখেছিলেন বলেই সকালে তো খেতে পারেনইনি, উপরন্ত সারাদিনের খাওয়া বরবাদ হতে চলছে। এমন অলক্ষণের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তৎক্ষণাৎ তিনি সুখচাঁদকে ধরে এনে ফাঁসিতে লটকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

নির্দেশ মত পেয়াদা গিয়ে হাজির সুখচাঁদের বাড়িতে। সম্রাটের নির্দেশ জানাতেই রীতিমত ভড়কে গেল সে। পেয়াদা তাকে আগাগোড়া সব কথা জানিয়ে বললো, তাই তার এই শাস্তি। সুখচাঁদের শত কাকুতি মিনতি সত্ত্বেও পেয়াদা তাকে ধরে নিয়ে চললো। পথে বীরবল এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন। সুখচাঁদ বীরবলের পা জড়িয়ে ধরে বললো, আমাকে বাঁচান। আমার বউ ছেলেমেয়ের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

বীরবল বণিককে অভয় দিলেন, প্রহরীদের কাছ থেকে তাকে একটু আড়ালে নিয়ে, কিছু কথা বলে আবার প্রহরীদের কাছে ছেড়ে দিলেন। পেয়াদারা বণিককে ধরে সোজা ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে এলো। জল্লাদ এসে উপস্থিত হলো। ফাঁসির পূর্বে মূহুর্তে মানিক চাঁদকে জিজ্ঞেস করা হলো যে মৃত্যুর আগে তার কোনো বিশেষ ইচ্ছা আছে কি না। তার যে কোনো ইচ্ছা পূরণ করা হবে।

সুখচাঁদ বললো, মহামান্য সম্রাট ভারতেশ্বর আকবর কে একবার দেখতে চাই। এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।

পেয়েদা-আমত্যরা রাজি হলো না। তারা বললো, সম্রাটের মেজাজ বিগড়ে আছে। একথা বললে তিনি হয়তো আরও রেগে যাবেন। কিন্তু সুখচাঁদের ওই একই কথা। শেষে খবর দেওয়া হলো সম্রাটকে। এলেন সম্রাট। সুখচাঁদকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার? মৃত্যুর আগে আমার দেখার ইচ্ছা কেন?

সুখচাঁদ করজোড়ে বললো, মহামান্য সম্রাট বাহাদুর, এটা কি সত্যি যে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই আমার মুখ দর্শনের কারণে সারাদিন কিছু খেতে পারেননি? আর তাই আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে নির্দেশ দিয়েছেন?

সম্রাট বললেন, শুধু কি আমি, যারাই সকালে প্রথমে তোমার মুখ দর্শন করে তারাই সারাদিন উপোস করে মরে। তোমার মতো এরকম অলক্ষুণে, অপয়া লোককে আমরা রাজ্যে বাঁচিয়ে রাখতে পারি না।

সুখচাঁদ বললো, আজ্ঞে জাঁহাপনা, আমি আজ প্রথমেই আপনার মুখ দর্শন করেছি। আর সেজন্যেই মরতে বসেছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার মুখ দেখে যদি ফাঁসিতে ঝুলে মরতে হয়, সেটা কেমন হচ্ছে?

একথা শুনে সম্রাট একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, তোমার কথাটা একদিক থেকে ভুল নয়। ঠিক আছে যাও, তোমার মৃত্যুদন্ড রদ করে দিলাম। কিন্তু তোমার ঘটে এই বুদ্ধি এল কি করে?

সুখচাঁদ বললো, আজ্ঞে জাহাপনা, বীরবল মহাশয়ের বুদ্ধি পেয়েছিলাম।

মুচকি হেসে চলে গেলেন সম্রাট।

লেখা: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।