হাসির গল্প: বইমেলায় দুই বন্ধুর মজার কাণ্ড

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ১২ মার্চ ২০২২
প্রতীকী ছবি

অনিক ও মানিক ভালো বন্ধু। ছুটির দিনে তারা কোথাও না কোথাও ঘুরতে যায়। এদিকে ঢাকায় চলছে অমর একুশে বইমেলা। তাদের একদিনও যাওয়া হয়নি। অনেকটা করোনার ভয়ে। আবার পকেটও খালি। আনন্দের বিষয় হলো, এখন আবার বইমেলার সময় বাড়ানো হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে একদিন বইমেলায় যাবে তারা।

বইমেলায় যাওয়ার সুযোগও এসে গেল। তাই শুক্রবার ছুটির দিনে তৈরি হলো বইমেলায় যাওয়ার জন্য। মেসের অন্য সদস্য রনি জানতে চাইল, ‘কই যাস তোরা?’

মানিক বললো, ‘যাই, একটু বইমেলা দেখে আসি।’
রনি হেসে বললো, ‘বইমেলা কি দেখার জিনিস?’

অনিক বললো, ‘তাইলে কি খাওয়ার জিনিস?’
রনি জবাব দেয়, ‘শুনেছি মেলায় মেলা খাবারের দোকান আছে। চাইলে কিনে খেতে পারবি।’
মানিক জোর দিয়ে বললো, ‘আরে না। আমাদের কি মুরগি ভাবিস? মেলায় খেতে বসে বাড়তি টাকা দেব কেন?’
অনিক তাড়া দিয়ে বললো, ‘অযথা সময় নষ্ট করার সময় নাই। চল তাড়াতাড়ি।’

যাত্রাবাড়ির মেস থেকে বের হয়ে শাহবাগের গাড়ি ধরল তারা। জ্যামে-জটে বইমেলার গেটে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। গেটের লম্বা লাইন দেখে অবাক হলো অনিক। ঘাড় ঘুরিয়ে মানিককে বললো, ‘এতো ভিড় কেন রে আজ?’

অনিক আশ্বস্ত করে বললো, ‘ব্যাপার না। এখন তো পাঠকের চেয়ে লেখক বেশি। তাই হয়তো এত ভিড়।’
মানিক বললো, ‘এত লেখক মেলায় এসে করে কি?’
অনিক বলে, ‘একজন আরেকজনের বই কেনে। সেলফি তোলে। ফেসবুকে ছবি দেয়। আবার সবার হাতে একটা করে বই দিয়ে ছবি তুলে লেখে, ‘আজ অনেক বই বিক্রি হলো’।

মানিক বললো, ‘সবাই নেয় বই?’
অনিক হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে নাহ। ছবি তোলার পর বই আবার স্টলে রেখে দেয়।’
মানিক বিস্মিত হয়ে জানতে চায়, ‘প্রকাশকরা রাগ করে না?’
অনিক জবাব দেয়, ‘নাহ। প্রচারেই প্রসার আর কি।

কথা বলতে বলতে তারা মেলার মধ্যে ঢুকে পড়ে। মানিক জলাশয়ের পাশটা দেখিয়ে বলে, ‘চল একটু বিশ্রাম নিই। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে।
বলতে বলতে স্থায়ী বেঞ্চে বসে পড়ে মানিক। ওর দেখাদেখি অনিকও বসে।

পাশ দিয়ে ‘এই বাদেম’ বলে হেঁটে যায় বাদামওয়ালা। অনিক আব্দার করে মানিকের কাছে, ‘দশ টাকার বাদাম কেন না!’
মানিক অবাক বিস্ময়ে বলে, ‘বইমেলায় বাদামও পাওয়া যায়?
অনিক বলে, ‘যাবে না কেন? লেখকরা দশ টাকার বাদাম কিনে দু’চার জনকে খাইয়ে যদি একটা বই গছাতে পারে, তাতে দোষ কী?

মানিক কিছুটা আশ্বস্ত হয়। হাসিমুখে বলে, ‘বুদ্ধিটা মন্দ না।
অনিক বলে, ‘দেখ দেখ।’
মানিক পাল্টা জবাব দেয়, ‘কী?’
অনিক বলে, ‘মেলায় কত মানুষ। অথচ বেশিরভাগের হাতেই কোনো বই নেই। এরা মনে হয় ঘুরতে এসেছে।’
মানিক হাসে, ‘বোকা, আমরাও তো ঘুরতে এসেছি। তুই কি বই কেনার জন্য এসেছিস?’
অনিক বলে, ‘আরে নাহ। চল সামনে চল।’

বইমেলার বিশাল পরিসরে ভিড়ের ঠেলাঠেলিতে এক সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওরা দু’জন। ফোনের নেটওয়ার্কেও কাজ করে না। ব্যর্থ মনোরথে ঘুরতে ঘুরতে একসময় দেখা হয় জলাশয়ের পাশে। দুজনই ধপাস করে বসে পড়ে স্থায়ী বেঞ্চে।
অনিক বলে, ‘কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?’

মানিক বলে, ‘কার ধাক্কায় যে কোন দিকে গেলাম বুঝতে পারলাম না। পরে দেখি তুই পাশে নেই।’
অনিক জানতে চায়, ‘অনেক বই কিনলি নাকি?’
মানিক হেসে বলে, ‘আরে নাহ। এগুলো সব বুকলিস্ট। স্টল থেকে নিয়ে নিছি। তুই বই কিনছিস?’
অনিকও হাসে। বলে, ‘আরে না, পরিচিত এক লেখকের কাছে সৌজন্য কপি চাইলাম। লেখক দিলো না।’

মানিক চতুর কণ্ঠে জবাব দেয়, ‘তুই তো বোকা, তাই সৌজন্য কপি চাইতে গিয়ে অপমান হলি। আমি এক লেখকের সঙ্গে দেখা করতে গেছি। লেখক বলে, বই নিছেন? আমি বললাম, না। পরের সপ্তাহে নেব। লেখক শুনে খুব খুশি হলেন। পরে তার সঙ্গে ছবি তুলে চলে এসেছি।’


ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।

এসইউ/কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।