বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত নিজেদের শ্রম আইনে বড় ধরনের সংশোধনী এনেছে কাতার সরকার। বহু প্রতিক্ষিত স্পন্সর চেঞ্জ আইনের অনুমোদন দিয়েছে কাতারের কেবিনেট। স্পন্সর চেঞ্জ আইনটি কাতার সরকার গত বছর ১৪ ডিসেম্বর অফিসিয়াল গেজেট আকারে প্রকাশ করে। গেজেটে বলা ছিল, চলতি বছরে ১৪ ডিসেম্বর আইনটি কার্যকর হবে। স্পন্সর চেঞ্জ আইনটি দুই মাস এগিয়ে অক্টোবর মাস থেকে কার্যকর হবে। কাতার ছেড়ে যাওয়া বা আবার নতুন করে কাতারে প্রবেশের দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে, অক্টোবর থেকে কেউ কাতার ছেড়ে গেলে, পরের দিন নতুন ভিসা নিয়ে কাতারে প্রবেশ করতে পারবেন।২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ কাতার। দেশটিতে চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। ২০১৩ সালে কাতারে বিদেশি কর্মীদের জীবনধারা নিয়ে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়েছিল, দেশটিতে নির্বিচারে শ্রমশোষণ চলে। আধুনিক দাস হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছিল বিদেশিকর্মীদের। মূলত এরপর থেকে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তোপের মুখে পড়ে কাতার সরকার। ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফাও নড়েচড়ে বসে। এ জন্য শ্রম আইনে সংশোধনের মূল কারণ মনে করা হচ্ছে ফিফার মন রক্ষা করা।নতুন আইনে ‘কফিল’ বা ‘কফালা’ এবং খুরুজ শব্দগুলোকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চাকরিদাতা এবং কর্মকর্তা বা কর্মচারী শব্দের ব্যবহার করা হবে। আর বিদেশি শ্রমিকরা একটি চুক্তিনামার ভিত্তিতেই দুই পক্ষের সুস্পষ্ট সম্মতিতেই নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন। নতুন নিয়োগদাতার অধীনে যেতে আগের নিয়োগদাতার অনুমতি লাগবে না।নতুন আইনে খুরুজ বা এক্সিট পারমিট সিসটেম রহিত না করে একটি নতুন নিয়ম করা হচ্ছে। সেই নিয়মের অধীনে যদি কোনো চাকরিদাতা তার অধীনস্তকে এক্সিট তথা দেশের বাহিরে যেতে না দিতে চান, তাহলে তার সফরের কমপক্ষে তিনদিন আগে অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলকে অবগত করতে হবে। কিন্তু চাকরিদাতা তার কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখতে পারবেন না। বরং তিনি তার বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশনে অভিযোগ করতে পারবেন।সকল শ্রমিক যারা ইতিমধ্যে কাতারে কাজ করছেন তাদের কাজের চুক্তি এই বছরের মধ্যে নতুন করে করতে হবে, যেদিন নতুন চুক্তি হবে সেদিন থেকেই তার কাজের দিন হিসাব শুরু হবে, কাজের চুক্তি শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি হলে তা কোনোভাবেই পাঁচ বছরের বেশি হবে না।কোনো শ্রমিক যে নিয়োগদাতার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সে যদি মারা যায় বা ওই প্রতিষ্ঠান যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবে সেই প্রবাসী শ্রমিককে শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে নতুন নিয়োগদাতার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো নিয়োগদাতা যদি তার কোনো কর্মী বা শ্রমিককে অন্য কারো কাজে লাগায় তাহলে সেই নিয়োগদাতার ৫০ হাজার কাতার রিয়াল জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এছাড়া কোনো নিয়োগদাতা যদি কোনো শ্রমিকের পাসপোর্ট নিজের কাছে রাখে তার জন্য ১০ হাজার কাতার রিয়াল থেকে ২৫ হাজার কাতার রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।বিএ
Advertisement