সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হরিণ শিকারিরা। বিভিন্নভাবে বনে ঢুকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করছেন তারা। শিকার করা হরিণের মাংস বিক্রয় করা হচ্ছে চড়া দামে। মাঝে মধ্যে অভিযানে কিছু মাংস ধরা পড়লেও অধিকাংশ থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেওড়া গাছের পাতা ও ফল হরিণের অন্যতম খাদ্য। এ এলাকায় হরিণ থাকে বলে শিকারিরা কেওড়া গাছের স্থলে শিকারের জন্য বেশি ফাঁদ পাতে। এরমধ্যে কাঠকাটা, জসিং এবং মহেশ্বরপুর অন্যতম জায়গা। শিকারিরা সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল দিয়ে এসব জায়গায় বেশি যাতায়াত করে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা রেঞ্জের কোবাদক স্টেশন, বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন এবং কৈখালী স্টেশন, সুন্দরবনের মোংলা, খুলনার পাইকগাছা ও শরণখোলা এলাকা থেকে শিকারিরা বনে প্রবেশ করে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, হরিণ শিকার করে অসাধুরা মাংস পাচারের অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহার করে বনের বিভিন্ন খাল। হরিণের মাংস কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রয় করে শিকারিরা। এছাড়াও ২০২৪ সালের পুরো বছরের জরিপে ২০ জন চোরাশিকারি গ্রেফতারের তথ্য বন বিভাগের নিকট থাকলেও শিকারির সংখ্যা আরও বেশি। অনেকে আবার ধরাই পরে না। ২০২৪ সালে বন বিভাগের তথ্যে ১৫০০টি হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধারের বিষয় অবগত করা হলেও এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে হরিণ শিকারের ঘটনা ঘটছে অহরহ।
আরও পড়ুন থামছে না হরিণ শিকার, ধরাছোঁয়ার বাইরে শিকারিরা সুন্দরবনে বন্ধ হচ্ছে না হরিণ শিকার ফের বেপরোয়া হরিণ শিকারি চক্র, অনলাইনে ছবি দিয়ে বিক্রি হচ্ছে মাংস ‘বাঘ কমে যাওয়া সুন্দরবনের বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে’বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সুন্দরবনে হরিণ শিকার, মাংস বিক্রয় এবং ভক্ষণ অনাকাঙ্ক্ষিত একটি প্রচলিত রীতিতে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র স্থানীয়দের মধ্যে নয় বরং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে হরিণের মাংসের প্রতি রয়েছে একটা বিশেষ ঝোঁক।
Advertisement
অথচ সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানের তিনটি শ্রেণির মধ্যে হরিণ প্রথম শ্রেণিভুক্ত খাদক। কোনো শ্রেণির খাদক বিলুপ্ত হলে বাস্তুসংস্থান ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ, এক স্তরের প্রাণী তার নিচু স্তরের প্রাণীর ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। কিন্তু একশ্রেণির অসাধুচক্র সুযোগ পেলেই হরিণ শিকার করেন। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে পর্যটনের অজুহাতে অসাধু চক্র সুন্দরবনে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে হরিণ শিকার করে।
তিনি আরও বলেন, হরিণসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দেশে কঠোর আইন রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। পরিবেশ ও সম্পদকে অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, হরিণ শিকার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কেওড়া গাছ এলাকায় নিয়মিত পেট্রোলিং এবং সিপিজি টিম এর মাধ্যমে নিয়মিত টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও হরিণ শিকার প্রতিরোধে এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে সচেতনতামূলক প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
আরএইচ/জিকেএস
Advertisement