সাহিত্য

আমিনুল ইসলামের পাঁচটি কবিতা

আমিনুল ইসলামের পাঁচটি কবিতা
পথচলা

কখনো পথের মোড়ে আমি তার মুখরিত হাততালি: শাবাশ বন্ধু, শাবাশ!কখনো ছাতাহীন দুপুরে সে আমার সুনিবিড় ছায়া: এসো!

Advertisement

দ্যাখো, কালো বামনের চোখে ঈর্ষা জাগিয়ে রোদেলা ক্ষেতের মতো কত জীবন ফলে উঠেছে সখাদ সোনায়; সরল বিশ্বাসের চোখে আগুন জ্বালিয়েকত নাইন ইলেভেন ডেকে এনেছে টমাহক ভালোবাসার ধর্ষণ উৎসব;যমুনার দাদিদাদি চোখের সামনে শিশির পতনের মতো কত জীবন ঝরে গেছে নিঃশব্দে; আবার কত মৃত্যু ফিরে গেছে দেখে নিয়ে বেহুলা-ভালোবাসার লখিন্দর-চোখ!আর প্রথম চুমুর মতন আমরা রয়ে গেছি সংযোজক অব্যয়।

অবশ্য দু-একবার আমাদেরও খোয়া গেছে বুকের নাক্ষত্রিক বোতাম;দু-একবার চরের ধানের মতো আমাদেরও মন উঠে গেছে অন্যের খৈলানে: আহা এই বুঝি আসল আনন্দের উঠান!

কিন্তু পরিধির রঙিন জোয়ার নিয়ে যায়নি ভাসিয়ে ভালোবাসার গন্দমগন্ধী কেন্দ্র!আর দোষারোপের এই দেশেও ভুলকে আমরা গালমন্দ করিনি,গুজব প্রযোজিত উত্তেজনার মুখেও পাড়া তুলিনি মাথায়: এই গেল রে! ওই হলো রে!

Advertisement

সম্রাট আকবরের বুকের মতো আমাদের মুক্ত বিশ্বাসের উঠোনে সানগ্লাস পরে এসেছে ভুল ভালোবাসা, আমরা তাকে পিঁড়ি পেতে দিয়েছি, চা খেয়েছে, হাতে হাত নিয়ে ছুঁয়েও দেখেছে, অতঃপর বিদেশি বিনিয়োগকারীর মতো ফিরে গেছে সঙ্গে নিয়ে তার লাভ-ক্ষতির রেমিট্যান্স।

তুমিও তো জানো, নদীশাসিত এই ভূগোলে আর দশটি নদীর বন্ধুত্বের জল নিয়েনিজেদের ভরে তোলে পদ্মা ও যমুনার বিবাহিত ধারা;অন্যদের ভালোবাসা নিয়ে খাদে ও সোনায় আমরা ভরে তুলেছি সম্মিলিত ভালোবাসার মৌরসি সিন্দুক, যা আমরা রেখে যেতে চাইসিরাজউদ্দৌলাহর পবিত্র উচ্চারণে কান পেতে থাকা আমাদের ধান কাউনের ভিটায়...

****

শীত

চিতাবাঘিনীর কোমর অথচ তুমি একটা ভীতুর ডিম,কেমনে হবে প্রেমে তেমার!—রোদ-পঁচিশেও হৃদয় হিম!

Advertisement

****

একখানি সুন্দর মুখ ঘিরে

সুন্দর তুমি; মুখখানি রচে অদ্ভুত উৎপ্রেক্ষাচোখ আর নদী, জল আর হাসি অনিঃশেষ এক প্রেক্ষা।

মনটা তোমার ম্যানগ্রোভ বন এই মন ছায়াপিয়াসীবন ভেঙে চলি নেমে অসে সাঁঝকত আর হবো সাহসী!

ফের রাখি চোখ নতুন সুদিনেলক্ষ ভিড়ের শহরেআমি শুধু নই আরও কত চোখমুগ্ধ চোখের বহরে!

বিরক্ত তুমি হও বুঝি কিছুআরক্ত হও যদিওনজরুল বাজে রক্তে, সে তোমাতাল সুরের নদীও।

পানসিও আছে সুরের নদীতেযাত্রী হতে বাধা কিগাঙচিল ওড়ে বিমুগ্ধ ডানাতারা জানে সুরসাধা কি।

সুন্দর তুমি; আরও সুন্দর দাদরা তালের নজরুলফিরায়ো না মুখ ওলো ও যুবতিমাঝপথে হলে সুর ভুল ।

****

শপথহীনের ভালোবাসা

সাকী, আমি কিন্তু কোনো শপথ করছি না! শপথের কী মূল্য বলো!শপথ তো কত মহাজনই করে থাকেন!

মনে করে দ্যাখো, কোমরে তলোয়ার— মুখে চাপদাড়ি—মীরজাফর কি শপথ করেনি হাত রেখে পবিত্র আয়াতের গায়ে? আজওচোখবাঁধা প্রবাদের শপথ করে সংবিধানের চোখ,অতঃপর বিচারের বাণী কেঁদে মরেহ্যান্ডকাপে হাজতে এনকাউন্টারের সার্কাসে;এখন হিপোক্রেটিসের শপথ শুনেহো হো করে হেসে ওঠে গলায় ঝুলে থাকা স্টেথোস্কোপ, হাসপাতালের হাওয়া;আরও শুনবে? ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের শপথ উচ্চারিত হওয়া মাত্র ‘না’ ‘না’ শব্দের ঝড় ওঠে ইথারের নদীতে—ঢেউয়ের ফেনা উপচে পড়ে বাতাসের গায়;এমন আরও কত শত শপথ শুনে অতিষ্ঠ গ্রহ-নক্ষত্রের মহাকর্ষ মাখা কান!

তোমার কি মনে নেই হৃদয়ের পয়গম্বর রবীন্দ্রনাথের বাণী: ‘মানুষ পণ করে পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য...’অতএব বিশ্বস্ত থাকার শপথ করছি নাতবু শপথহীন এই আমাকে বিশ্বাস করো সাকী!

আমার কেতাবে ভালোবাসা মানে ভালোবাসাআমি কোনো ধর্ষক নই,—প্রেমিকঅথচ আমার ভালোবাসা আজও ঝুলে আছে ডোরবেল ছুঁয়ে একটি বন্ধ দরোজায়যেভাবে ঝুলে আছিল বাসরঘরের স্বপ্নে মুগ্ধ ফেলানীর লাশ—কাঁটাতার নামক মৃত্যুর দেয়ালে;মাটিমুখী চুলে মায়ের হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো জন্মভূমি থেকে ভেসে আসা ভোরের কুয়াশামাখা নদীমাতৃক হাওয়া...

অকালমৃত্যু নয়, আমার ভালোবাসা চায়—মহিমাখচিত জয়যা দেখে হাততালি দেবেনভূমধ্যসাগরের তীরে তীর-ধনুক ফেলে যাওয়া স্বর্গবাসী কিউপিড স্বয়ং; দেবে তুমিও।

****

বগলে ইট রেখে হেঁটে চলেছে দিন

দ্যাখো, বগলে ইট রেখে হেঁটে চলেছে দিন,মাথায় গোল করে বাঁধা শেখ ফরিদের পাগড়িসূর্যটা আড়াল হলেই ভালোবাসার এসএমএস পাঠায় নক্ষত্রের খোঁপা পরা রাতের মেসেঞ্জারে: লাভ ইউ মাই ডিয়ার! নাভির নিচে মুচকি হাসে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র! আর হায় রাত, তুমিও তো! ভালোবাসার নামে নীল উলকি এঁকে বাঁহাতে, চান্স পেলেই তারকাখচিত লুটেরার ঠোঁটে শোঁকো বারোয়ারি রেণু মাখা মহব্বতের ঘ্রাণ!অথচ হাসিঠোঁটে একদিন রাত ছিল আনারকলিএকদিন ফুলহাতে দিন ছিল শাহজাদা সেলিম!

এসইউ/জিকেএস