যে কোনও রাষ্ট্রের, আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে কোনও সরকারের, একটি মূল চালিকাশক্তি থাকে। আর তা হলো ক্ষমতাসীন দল ও সে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশ্বের সকল দেশেই এমনটি হয়। সাধারণত রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক।
Advertisement
বাংলাদেশে যেহেতু বর্তমানে কোনও দলীয় সরকার ক্ষমতায় নেই, সেহেতু বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তির আসনে কোনও রাজনৈতিক দল ও তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব আসীন নেই। তাহলে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারের মূল চালিকাশক্তি কে বা কারা?
বর্তমান বাংলাদেশ তথা জুলাই-আগস্টের বিপ্লব- পরবর্তী বাংলাদেশ বর্তমানে তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নয়, তিনটি অরাজনৈতিক স্তম্ভ পরিবর্তিত বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করছে এবং নির্দলীয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই তিন স্তম্ভের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কারের পথে শুদ্ধতম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশের তিন চালিকাশক্তির সর্বাগ্রে রয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে বৈষম্য মুক্তির পথ রচনা করেছে। ছাত্র আন্দোলন নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের আশা নিয়ে এসেছিল এবং এখনও সে আশা সফলের লক্ষ্যে বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে নতুন দিনের প্রত্যয়ে সংগ্রাম করে চলেছে।
Advertisement
বর্তমান বাংলাদেশের আরেক প্রধান চালিকাশক্তি হলেন ড. ইউনূস। যার ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, দক্ষতা ও ভাবমূর্তির উপর আস্থা রেখেছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। যে আস্থার ছাপ বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্য বিরোধী জনতার মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে ড. ইউনূস পুরো বিশ্বকে তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ও বিশ্বাসী করেছে। সমগ্র বিশ্ব তার নেতৃত্বকে নিঃসঙ্কোচে মেনে নিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয় যে চালিকাশক্তি বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ ও সংহত করেছে, তা হলো দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী। বিশেষত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর দেশ যখন শৃঙ্খলাহীন এক গভীর নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশকে সংঘাত ও হানাহানির মুক্ত করেছে, নাগরিকদের জানমালের হেফাজত করেছে এবং দেশের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করেছে।
এই তিন চালিকাশক্তিই বর্তমান বাংলাদেশের মূল স্তম্ভ স্বরূপ, যাদেরকে সমগ্র দেশবাসী, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সমাজ অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। আর এই তিন চালিকাশক্তিই বিদ্যমান সঙ্কুল পরিস্থিতির শত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তূপ থেকে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।
বর্তমান বাংলাদেশের এই তিন মূল স্তম্ভ বা চালিকাশক্তি কিন্তু সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্যের বাইরে অবস্থান করে। এদের যাবতীয় কার্যকলাপ ও পদক্ষেপের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বার্থ। ফলে এদেরকে দলীয় রাজনীতির দড়ি টানাটানির বিষয় তথা প্রতিপক্ষ বানানোর কোনও সুযোগ নেই। এদেরকে প্রতিপক্ষ ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা মানে হলো বর্তমান বাংলাদেশের মূল স্তম্ভ তথা চালিকাশক্তিকে আঘাত করা, যা প্রকারান্তরে বাংলাদেশকে আঘাত করার শামিল।
Advertisement
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, অতীতের ধারায় বর্তমান বাংলাদেশের তিন মূল স্তম্ভকে আঘাত তথা মানহানি বা চরিত্রহনন করা হচ্ছে। দেশী-বিদেশী পর্যায় থেকে এসব অপকর্ম করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের শত্রুরা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এসব গর্হিত ও দেশবিরোধী কাজ করছে।
বিশেষত, পরাজিত দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদী চক্র ও তাদের দোসররা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ষড়যন্ত্রকারী রূপে হাজির হয়েছে। তাদের বদমতলব হলো মিথ্যাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের তিন মূল স্তম্ভের ক্ষতি করা। কুৎসা, নিন্দা, অপবাদের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থের রক্ষকদের মানহানি করা। এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে ছাত্রজনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করা। এইসব অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করাই তাদের আসল টার্গেট বা বদমতলব। দেশবাসীকে বিপদে ফেলে দেওয়াই তাদের হীন উদ্দেশ্য।
সঙ্কুল ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বাংলাদেশ তিন মূল স্তম্ভের দ্বারা যখন জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বার্থ সংরক্ষিত করছে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, তখন জাতির প্রতিটি সদস্যের জাতীয় কর্তব্য হলো এদের পাশে এসে দাঁড়ানো এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে সম্মিলিত শক্তিতে এদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের যাবতীয় অসৎ উদ্দেশ্য ও বদমতলবকে পরাজিত করা।
লেখক, অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/জিকেএস