জাতীয়

সরকার নয়, ঘোষণাপত্র আসবে শিক্ষার্থী ও সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার কোনো ঘোষণাপত্র দেবে না। এটি আসবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা এবং সব রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এ কথা জানান।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বিষয়টি নিয়ে অনেক জলঘোলা হবে। ঘোষণাপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে প্রস্তাবনা দিয়েছে। ঘোষণাপত্র কিন্তু সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্রের প্রক্রিয়া সহজতর করা নিয়ে কাজ করছে। 

আরও পড়ুন

Advertisement

জুলাই ঘোষণাপত্র দেবে সরকার, শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র  শহীদ মিনারে কর্মসূচি হবে, তবে জুলাই ঘোষণা হচ্ছে না 

‘ঘোষণাপত্র আসবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সব রাজনৈতিক পক্ষ, দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেটি হবে। সবার সম্মতিক্রমে ঘোষণাপত্র হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে।’

মাহফুজ আলম বলেন, সুতরাং এই দুটি জিনিস (ঘোষণাপত্র কে দেবে) সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা সরকার নিজে বানাইয়া (তৈরি করে) কোনো প্রক্লেমেশন দিচ্ছি না। শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা ও সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রণীত হবে। আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা শুরু ও শেষ হয়ে যাবে। 

তিনি বলেন, ছাত্ররা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তারা একটি ঘোষণাপত্র দেবেন। কিন্তু সরকার যখন অনুভব করলো যে বিষয়টি শুধু ছাত্রদের দিক থেকে গেলে সেটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ফলে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে।

এ উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করছি সরকার গণঅভ্যুত্থানের যত পক্ষ আছে সবার সঙ্গে কথা বলে আগামী সপ্তাহে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে এবং কবে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ হবে, সরকার সবার সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত জানাবে। আগামী সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করা হবে।

Advertisement

গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, ছাত্রদের ঘোষণাপত্র পাঠের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি তাদের ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’। এ বক্তব্যের একদিন পরই প্রেস সচিব জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার। 

আরও পড়ুন

‘মার্চ ফর ইউনিটি’র নামে সমাবেশ কেন, কার স্বার্থে বিএনপির সভায় জামায়াতবিরোধী স্লোগান, প্ল্যাকার্ড

সরকারের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য আসার পর ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ থেকে সরে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে ‘জুলাই প্রক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এদিকে ব্রিফিং উপদেষ্টা মাহফুল আলম বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র তৈরি করা। এই সময় কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। এজন্য শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাই। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হতেও পারে। 

মাহফুজ বলেন, একটি ঘোষণাপত্রে মূলত দুটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে কী কারণে ঘোষণাপত্র সেটি উল্লেখ থাকে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ফ্যাসিজম ও এই ফ্যাসিজমের ধারাবাহিকতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ঘোষণাপত্রে বর্ণনা করা হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে।

তিনি বলেন, ঘোষণাপত্রের দ্বিতীয় অংশে রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে তার উল্লেখ থাকবে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। যেসব বিষয়ে সবার মধ্যে এরই মধ্যে ঐক্যমত্য আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।

‘গত ১৬ বছরে যারাই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ও গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের দীর্ঘ সংগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে তাদের সবার কথা সাধারণ ও বৈশ্বিক ভাষায় লিপিবদ্ধ থাকবে। জুলাই ঘোষণাপত্র ইনক্লুসিভ অ্যান্ড ইউনিফাইড ডকুমেন্ট হবে’- যোগ করেন এ উপদেষ্টা।

এমইউ/এমকেআর/জিকেএস