আইন-আদালত

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রম নিয়ে আপিল আবেদন, শুনানি ১৬ জানুয়ারি

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদার মানক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) সংশোধন করে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করেছে বিচারকদের সংগঠন জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

এ সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানির জন্য আগামী ১৬ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন।

আইনজীবী ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর দ্রুত শুনানির জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি আদালতে বলেন, এটির দ্রুত শুনানি হওয়া উচিত। কারণ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের এটি ঠিকমতো হয় না। পরে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের এই মামলা শুনানি করতে আগামী ১৬ জানুয়ারি রাখতে বলেন। ওই দিন ১০ নম্বর ক্রমিকে থাকবে।

২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ঠিক করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

Advertisement

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বিষয়ে আপিল বিভাগের প্রকাশ করা পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা (সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী( সাবেক প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি)।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের শেষাংশে বলা হয়, সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। তাই রাষ্ট্রীয় পদক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদধারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমপদে উন্নীত হবেন। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অবস্থান হবে পদক্রমের ১৭ নম্বরে।

এর আগে অতিরিক্ত জেলা জজদের অবস্থান রাষ্ট্রীয় পদক্রমে উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৬ সালের পদক্রমে জেলা ও দায়রা জজদের ২৪ নম্বরে রাখা হয়। কিন্তু সমমর্যাদাসম্পন্ন বিবেচনায় কমান্ড্যান্ট মেরিন একাডেমি, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি, এমনকি বিএসটিআইয়ের পরিচালকের পরে আছেন জেলা ও দায়রা জজ।

Advertisement

আরও পড়ুন জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি

অবশ্য রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পদক্রম রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র বা অন্য কোনো কার্যক্রমে এর ব্যবহার যেন না হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে।

সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে বলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে রিটটি করেন।

২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত বিশেষ কৌঁসুলি আবদুর রব চৌধুরী শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে পদক্রমে প্রধান বিচারপতির অবস্থান স্পিকারের সঙ্গে ৪ নম্বরে ছিল। সে সময় উপরাষ্ট্রপতি ২ নম্বরে ছিলেন। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি পদটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ৩ নম্বর পদক্রম থেকে প্রধানমন্ত্রী পদটি ২ নম্বর পদক্রমে উন্নীত হয়। রাষ্ট্রপতি ১ নম্বর পদক্রমেই আছেন। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি একই পদক্রমে থাকা সত্ত্বেও পরে স্পিকারকে ৩ নম্বর পদক্রমে রেখে প্রধান বিচারপতিকে ৪ নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তাই প্রধান বিচারপতিকে স্পিকারের সঙ্গে ৩ নম্বরে রাখতে হবে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এক ধাপ ওপরে তালিকার ৭ নম্বরে আসবেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে পদক্রম ৮ নম্বরে আছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল ৮ নম্বরে থাকবেন। এর আগে হাইকোর্টের বিচারপতিরা নির্বাচন কমিশনার ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের সঙ্গে পদক্রমের ৯ নম্বরে ছিলেন।

এছাড়া পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্য এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে তিন ধাপ ওপরে ১২ নম্বরে এবং সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের পদক্রম এক ধাপ ওপরে ১৫ নম্বরে রাখতে বলা হয়েছে। পদক্রম অনুযায়ী এখন ১৫ নম্বর ধাপে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক অ্যাটর্নি জেনারেলের সমান পদক্রমে আছেন। আর পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে ১৬ নম্বরে আছেন পিএসসির চেয়ারম্যান। পর্যবেক্ষণে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, সরকার আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কাজ করবে।

এফএইচ/বিএ/এএসএম