সবুজের দিকে পা বাড়াতেই হরেক প্রজাতির ফুলের গাছ। যতোই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, নিজের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যেন স্বাগত জানাচ্ছে মধুরিমা। কোনো কোনো গাছে সুগন্ধি ফুল ফুটে আছে, আবার কোনোটির নেই সৌরভ। এখান থেকেই দেখা মিলবে পূর্বাকাশে সূর্যের হাসি কিংবা শেষ দিগন্তে অস্ত যাওয়ার দৃশ্য। মিলবে মন ও মেঘের মিতালি। আশ্বিনের প্রায় শেষ দিকে শীতের হালকা বাতাসে হিমভাব ঘিরে ধরেছে প্রকৃতিতে। এ যেন মেঘে মেঘে ভেসে যাওয়া অপূর্ব এক বিকেল।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের স্বপ্নবাজ এক মানুষের নাম প্রবাসী মঈন উদ্দিন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী হয়েও দেশের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার টানে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর এলাকায় ৩৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তুলেছেন ‘হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট’ নামের একটি বাগান।
সেই বাগানকে সাজিয়েছেন বৃক্ষ, গুল্ম, বিরুৎ সহ সপুষ্পক ও অপুষ্পক প্রায় ৪০ হাজার প্রজাতির গাছ দিয়ে। তবে তার বাগানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো হরিণ। ছোটবেলা থেকে প্রবাসী মাঈন উদ্দিনের বৃক্ষ তরুলতার প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ছিল, সেই ভালোবাসাকে পুঁজি করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরুর দিকে কিছুটা বেগ পেতে হলেও তা শোভন করতে সক্ষম হন।
সরেজমিনে তার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, হাঁড়ি ভাঙা, ব্যানানা, মিয়াজাকি , আম্রপালি, কিউজাইসহ প্রায় ১৬০০ আম গাছ গাছ। ফুল গাছের মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছে- গাঁদা, সিলভিয়া, চন্দ্র মল্লিকা, স্নোবল,ডায়েন্থাস, রজনীগন্ধা, জিনিয়া, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, অস্ট্রেলিয়ান বোটল ব্রাশ, সিলভার কুইন জাকারান্ডা, চন্দ্রপ্রভা, কৃষ্ণচূড়া, চেঞ্জার স্থলপদ্ম ৪ কালার ফুরুস, হাসনাহেনা, বিদেশি জবা চাইনিজ পুরি ফুলের সুগন্ধ যে কারও হৃদয় কাড়বে।
Advertisement
এছাড়া আছে সাদা ও নীল ১২টি ময়ূর, রাজহাঁস, চীনা হাঁস ও দেশি মুরগীর খামার। কলা ও মাল্টার বাণিজ্যিক চাষও শুরু করেছেন এই স্বপ্নবাজ মানুষ। হরিণও দৃষ্টিনন্দন কারো কাজ বিস্তৃত বাগানকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বাগানটি দেখতে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমী নানা বয়সী মানুষ। পরিবার পরিজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বনভোজনের জন্য এখানে সুবিধা আছে।
আরও পড়ুন কর্ণফুলীর পাড়ে নতুন গন্তব্য কল্পলোক পর্যটকদের প্রশান্তির খোরাক আকিলপুর সমুদ্রসৈকতখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম-নীতি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠছে এখানকার হরিণগুলো। হরিণের বিচরণ আর প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই এখানে ভিড় করেন দর্শণার্থীরা। হরিণগুলোর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে তদারকি করছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ। খামারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিলসডেল মাল্টি ফার্ম’।
খামারের উদ্যোক্তা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মঈন উদ্দিন, ১৯৮৬ সাল থেকে ৩৮ বছর প্রবাস জীবনযাপন করলেও দেশের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার টানে গাছ-গাছালি হরিণ, ময়ূরসহ, ফুলজ বনজ ৪০ হাজার বৃক্ষ দ্বারা সুসজ্জিত আমারই স্বপ্নের বাগান। বাণিজ্যিকভাবে খুব বেশি লাভজনক না হলেও শুধু ভালোবাসার প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা টানে এ বাগানটি করা।
তিনি আরও বলেন, খামারটি এখন দর্শনার্থীদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এখানে হরিণ ছাড়াও গড়াল, ঘোড়া, খরগোশ, ময়ূর, রাজহাঁস, দেশি-বিদেশি হাঁস, কালিম পাখি, ঘুঘু, বন মোরগসহ নানা প্রজাতির পাখি আছে। হরিণ পালনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হরিণের খামারের লাইসেন্স পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে হয়েছে। এটা বন্যপ্রাণী সুরক্ষার বিষয় সবকিছু ঠিক রেখে অনুমোদন নিতে হয়।’
Advertisement
মঈন উদ্দিন বলেন, ‘২০১৩ সালে লাইসেন্স পাওয়ার পর বাণিজ্যিক খামার শুরু করেছি। প্রথমে রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ১১টি হরিণ কিনে আনি। এরপর একটা পর্যায়ে সেখান থেকে বংশ বিস্তার করে ২৬টি হরিণ হয়েছিল। এক বছর আগে বজ্রপাতে তিনটি হরিণ মারা যায়। তবে হরিণ বিক্রিতে ক্রেতাকে অবশ্যই বনবিভাগ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, ‘আমি এখানে নতুন দায়িত্বে এসেছি। এখনো অলিনগরে অবস্থিত হরিণের খামারে যাওয়া হয়নি। তবে অফিস স্টাফদের কাছ থেকে বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছি।’
কীভাবে যাবেন?দেশের যে কোনো স্থান থেকে মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহা পৌরসভা নামতে হবে। এরপর লোকাল সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করেরহাট যাওয়া যাবে। অথবা রিজার্ভ সিএনজি যোগে অলিনগর এলাকায় অবস্থিত হিলসডেল মাল্টি ফার্মে যাওয়া যাবে।
জেএমএস/এএসএম