জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, ব্রিটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছে কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করতো। কিন্তু একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাবেন আর তাকে উধাও করে দেওয়া হবে, এমন উধাও করে দেওয়াটা অতীতে ছিল না।
Advertisement
সোমবার (৬ জানুয়ারি) ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির সভাপতির বক্তব্যে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অ্যাসোসিয়েটস এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা সরকারের চাপে পড়ে দেশ ছাড়ার ১১ বছর পর ফিরেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখানে যারা আইনজীবী আছেন তারা প্রশাসনে যাবেন। আপনারা যদি শক্তিশালী হয়ে থাকেন আজ হোক, কাল হোক দেশ ভালো হতে বাধ্য।
Advertisement
তিনি বলেন, ব্রিটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছে, কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করতো। কিন্তু একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাবে আর তাকে উধাও করে দেওয়া হবে, এমন উধাও করে দেওয়াটা অতীতে ছিল না।
অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপনি ইংল্যান্ডে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। কোনো উপায় নেই। আর এখানে কী চলছে আমরা সবাই জানি। আসুন সবাই একমত হই।
তিনি বলেন, ১১ বছর কেন আমি বাইরে থাকলাম? ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো। দেশের অবস্থা বেশি খারাপ। আমাদের বেশি ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে। চিন্তা করলাম মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাবো। ১৮ তারিখ (ডিসেম্বর) সকালে আমি লন্ডনে নামলাম। হঠাৎ করে দুপুরে জানতে পারলাম আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি নাকি ঢাকার রাস্তায় ছিলাম। পুলিশের ওপর বোমা মেরেছি। এর কিছুদিন পর উচ্চ পর্যায়ের এক দেশের কূটনৈতিক সোর্স থেকে জানতে পারলাম। শেখ হাসিনা আমাকে গ্রেফতার করার অনুমতি দিয়েছেন, আইসিটির অধীনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে)। কিছুই আমি জানতাম না। সুতরাং এটা আল্লাহর মেহেরবানি। ৫ বছর পুলিশ আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করেছে। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর (২০১৩) পুলিশ আমার বাসায় গেছে। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত বিদেশে চলে গেলাম। ফিরতে ১১ বছর লেগেছে। ১১ বছর আমি ইংল্যান্ডে থেকে প্র্যাকটিস করেছি।
তিনি বলেন, একটা জিনিস যদি রক্ষা করতে পারতাম, জুডিসিয়ারি; অনেক লিডারকে দেশ ছাড়তে হতো না। অনেককে জেলে যেতে হতো না। ১৯৩৫ সালের ব্রিটিশ সরকার থেকে গত সরকার পর্যন্ত অলমোস্ট আমাদের জুডিসিয়ারি স্বাধীন ছিল, প্রেস স্বাধীন ছিল, মানুষের স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে গত সরকার হরণ করেছিল। সুতরাং জডিসিয়ারিকে যদি আমরা বাঁচাতে পারতাম, পারতাম কি না আমি জানি না, তাহলেও এই জাতি অনেক আগে এই ডিক্টেটরশিপের হাত থেকে রক্ষা পেতো।
Advertisement
আইনজীবী ও জনসাধরণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ বার (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চ (আদালত), আপামর জনসাধারণ সবার একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা আমাদের জুডিসিয়ারিকে কোনো সময়ই পরাধীন হতে দেবো না। একই সঙ্গে আমরা একটা স্বাধীন বার গড়ে তুলবো ।
চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আইনজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস