দেশজুড়ে

কাজে আসছে না ভারতের উপহারের অ্যাম্বুলেন্স, ৩ বছরে রোগী উঠেছে একজন

কাজে আসছে না ভারতের উপহার দেওয়া এনআইসিইউ সেবা সম্বলিত চারটি অ্যাম্বুলেন্স। ফলে তিন বছর ধরে গ্যারেজে তালাবদ্ধ পড়ে আছে এগুলো। এসময়ের মধ্যে রোগী উঠেছে মাত্র একজন।

Advertisement

এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় এগুলোর ইঞ্জিন ভারী ও বডি হালকা হওয়ায় চালকরা সড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে গন্তব্যে যেতে সময় লাগে বেশি। এছাড়া এতে এনআইসিইউর নামে যে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে তা নামমাত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে করোনা মহামারির পর উপহার হিসেবে এনআইসিইউ সম্বলিত ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ সরকারকে দেয় ভারত। এরমধ্যে একই বছরের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় এক অনুষ্ঠানে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাতে ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন। এরপরের বছর ২০২২ সালের ৭ মার্চ এক অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন। এ নিয়ে জেলায় চারটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার পাওয়া যায়।

এরপর নানান সমস্যার কারণে এগুলো ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে পেরেছে মাত্র একদিন। এই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে সময় লেগেছে ৭ ঘণ্টা, যেখানে সাধারণ একটি অ্যাম্বুলেন্সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা পড়ে যান অস্বস্তিতে।

Advertisement

এত সময় লাগার কারণ হিসেবে চালকরা জানান, অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্স থেকে এর লোড অনেক বেশি। ফলে সড়কে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। কারণ এটি অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্স থেকে ভিন্ন। এর সঙ্গে সব সময় একজন চিকিৎসক থাকতে হয়। কিন্তু সে সময় এসব অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কোনো চালক ও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ দেওয়া হয়নি জ্বালানি তেল। এসব সমস্যার কারণে গত তিন বছরে আর কোনো রোগী পরিবহন করা হয়নি অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিয়ে। গ্যারেজে পড়ে থেকে বর্তমানে এর ইঞ্জিন ও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে পড়েছে।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুজ্জামান বলেন, ভারতীয় উপহারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে প্রথম দিন রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় দেখা দেয় বিপত্তি। অ্যাম্বুলেন্সের গতি হবে দ্রুত, কিন্তু এই অ্যাম্বুলেন্সের যে গতি উঠছিল তা দেখে রোগীর স্বজনরা ক্ষেপে যান। ৩ ঘণ্টার পথ যেতে লেগে যাচ্ছিল ৭-৮ ঘণ্টা। এ অবস্থায় তো রোগী মারা যাবে। তাই মাঝ রাস্তায় রোগী নিয়ে নেমে অন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে যান তারা। এরপর থেকে এটি নিয়ে আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।

একই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার ঢালি জানান, এর গতি উঠে না। নানান সমস্যার কারণে গত তিন বছর ধরে গ্যারেজ পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

একই সমস্যার কথা জানালেন কসবা, আখাউড়া ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

Advertisement

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, পিকআপের বডিতে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে দিয়েছে। হাইওয়েতে এটি অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় এবং চলন্ত অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায়। রোগীকে তুলে দিতে হয় অন্য অ্যাম্বুলেন্সে। এটি নামমাত্র আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স। এখন গ্যারেজে পড়ে আছে।

কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, উপজেলার সড়কের তুলনায় এই অ্যাম্বুলেন্সের বডি অনেক বড়। চালাতে সমস্যা। এছাড়া এর জন্য তেল ও চালক কোনোটাই বরাদ্দ নেই। তাই গ্যারেজে পড়ে আছে।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বর্মণ জানান, অ্যাম্বুলেন্সগুলো দেওয়ার পরই আমরা অফিসিয়ালি জানিয়ে দিয়েছি এসব চলার মতো রাস্তা আমাদের নেই। এরপর গত তিন বছরে ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে পেরেছে মাত্র একদিন।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/জেডএইচ/জিকেএস