মেক্সিকোতে চীনা বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ার ফলে ‘মেইড ইন মেক্সিকো’ পণ্যগুলোর উৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মেক্সিকো চীনের বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসে। সস্তা শ্রম, উন্নত অবকাঠামো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি মেক্সিকোকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে।
Advertisement
চীনা কোম্পানিগুলো মেক্সিকোতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে। বিশেষত বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) এবং অটো-পার্টস খাতে চীনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ২০২৩ সালে মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই রপ্তানির মধ্যে চীনা উপাদানের অংশও বেড়ে গেছে, যা ২০০২ সালে ৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন>>
মেক্সিকোয় পণ্য বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে চীন প্রথমদিনই চীন-মেক্সিকো-কানাডার ওপর বাড়তি শুল্ক বসাবেন ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জিতবে না, ট্রাম্পকে চীনযুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, চীনা কোম্পানিগুলো মেক্সিকোকে একটি ‘শুল্কমুক্ত প্রবেশদ্বার’ হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও ‘মেইড ইন মেক্সিকো’ পণ্যে চীনা উপাদান ব্যবহারে সব ধরনের নিয়মনীতি মেনে চলার দাবি করা হয়। তবু মেক্সিকোতে চীনের উপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
Advertisement
চীনের ইভি শিল্প বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র চীনা ইভি আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তবে মেক্সিকোতে নির্মিত চীনা গাড়ি এ শুল্কের আওতায় পড়ে না। অবশ্য চীনা কোম্পানিগুলোর মেক্সিকোতে ইভি কারখানা গড়ার প্রকল্পগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
চীনা কোম্পানিগুলো সরাসরি গাড়ি তৈরির চেয়ে সরঞ্জাম ও উপাদান উৎপাদনে বেশি জোর দিচ্ছে। এতে মেক্সিকোতে চীনের ভূমিকা বাড়লেও দেশটির স্থানীয় শিল্পে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
মেক্সিকোর অবস্থান ও ভবিষ্যৎমেক্সিকো চীনের বিকল্প সরবরাহ চেইন গড়তে চায়। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (ইউএসএমসিএ)-এর ভবিষ্যৎ ২০২৬ সালে পর্যালোচনা হবে। মেক্সিকো এখন চীনা বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে চায়।
তবে মেক্সিকো যদি চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এটি নিজস্ব শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মার্কিন ও মেক্সিকান কর্মকর্তারা একমত যে, মেক্সিকোকে চীনের বিকল্প উৎস হিসেবে গড়ে তোলাই উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক।
Advertisement
এখন পর্যন্ত ‘মেইড ইন মেক্সিকো’ মানেই ‘মেইড বাই চায়না’ নয়। তবে চীনা উপাদানের ব্যবহার মেক্সিকোর রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করে মেক্সিকো কি চীনের প্রভাব কমিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/