দেশজুড়ে

কুয়াশায় কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকিতে বোরো বীজতলা

যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা-বেনাপোলে শীত ও কুয়াশা দুটোই বেড়ে চলেছে। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে প্রকৃতি। এ পরিস্থিতিতে কৃষকের সদ্য প্রস্তুত করা বীজতলা কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকিতে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষক তাদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে অনেকটা দেরিতে এ অঞ্চলে শীত অনুভূত হতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষের দিকেও এ অঞ্চলে গরমের প্রভাব ছিল। তবে ডিসেম্বরের শুরুর দিন থেকে তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। গত কয়েকদিন থেকে এ অঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে।

রোববার (৫ জানুয়ারি) যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে যশোরের তাপমাত্রা কমছে। প্রতিদিনই এক থেকে দুই ডিগ্রি তাপমাত্রা কমছে বলে আবহাওয়া অফিসের ওই কর্মকর্তা জানান।

শীতের তীব্রতার পাশাপাশি প্রচণ্ড কুয়াশায় এ অঞ্চলে চরম হুমকিতে পড়েছে বোরোর বীজতলা। এতে কৃষকের খরচ বাড়ছে বলে জানান তারা।

Advertisement

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শার্শা উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৫৭ হেক্টর। সেই অনুপাতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১১৭৫ হেক্টর। এখনো অনেকে বোরোর বীজতলা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। উপজেলার অনেক মাঠে কৃষক তাদের বোরো ক্ষেত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।

কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বোরোর বীজতলা তৈরির এখন ভরা মৌসুম। এজন্য আমরা ধানের চারা তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা বাজার থেকে পলিথিন কিনে এনে বীজতলা রক্ষার চেষ্টা করছি।

আব্দুল মান্নান নামে আরেক চাষি বলেন, এমনিতে এ বছর আমন আবাদে ফলন কম হয়ে আমরা লোকসানে পড়েছি। তারপর বাজার থেকে চড়ামূল্যে পলিথিন কিনে বীজতলা রক্ষা করতে গিয়ে বাড়তি খরচের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে বোরো আবাদ ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, শীত ও কুয়াশায় ধানের চারার মাথায় পানি জমে থাকা এবং একইসঙ্গে ঠান্ডাজনিত কারণে বীজতলা বিনষ্ট হয়। এজন্য কৃষকদের পুরো বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বোরোর বীজতলা রক্ষায় এখন পলিথিনই একমাত্র ভরসা। এ বছর অনেক চাষিই সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আবু তালহা বলেন, বোরোর ভালো ফলনের জন্য মানসম্মত ধানের চারার বিকল্প নেই। এজন্য আমরা অনেক আগে থেকেই কৃষককে এসব প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলার জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষকও তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বীজতলা পলিথিন দিয়ে রাতের বেলা ঢেকে রাখছেন এবং দিনের বেলা পলিথিন তুলে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান তাপমাত্রা যদি আরও কমতে থাকে তাহলে ক্ষেত থেকে ঠান্ডা পানি বের করে বেশি বেশি সেচ দেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

জামাল হোসেন/এফএ/এমএস