দেশজুড়ে

শীতে কাবু মৌমাছি, বাক্সে মিলছে না মধু

পাবনায় সপ্তাহ খানেক ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত তিনদিন ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসে জেঁকে বসেছে কনকনে ঠান্ডা। এর ফলে মৌবক্স থেকে বের হচ্ছে না মৌমাছি। ফলে মধু উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে রোববার (৫ জানুয়ারি) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌমাছি বের হতে দেখা গেছে।

Advertisement

মৌচাষিরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে প্রতিটি মৌবক্স থেকে গড়ে দেড় থেকে দুই কেজি করে মধু সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গত ২-৩ সেটি হচ্ছে না। উল্টো সংগ্রহকৃত মধু বক্সে রাখা হয়েছে মৌমাছির খাওয়ার জন্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল, ফরিদপুরের বিএল বাড়ি, সোনাহারা, ভাঙ্গুড়ার খান মরিচ ও সদর উপজেলার গয়েশপুরসহ জেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহে স্থাপন করা হয়েছে মৌবক্স। তীব্র শীতের হাত থেকে মৌবাক্স ও মৌমাছি রক্ষায় পলিথিন ও চটের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন চাষিরা। এতে বাক্সের ভেতরে বাতাস ঢুকতে না পারলেও মধু সংগ্রহে বের হচ্ছে না মৌমাছি।

ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামে ১৫০টি মৌবক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, সপ্তাহে প্রতিটি মৌবক্স থেকে প্রায় তিন কেজি মধু সংগ্রহ করি। কয়েকদিন ধরে যে শীত এতে মধু সংগ্রহ নিয়ে চিন্তা কম করছি। আপাতত মৌবক্স ও মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় আছি। সংগ্রহকৃত মধু মৌমাছির জন্য রেখে দিয়েছি। যেনো সেটা খেয়ে তারা বেঁচে থাকতে পারে।

Advertisement

ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া গ্রামের গোলাম ও শফিকসহ কয়েকজন মৌ চাষি জানান, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে মৌবাক্স থেকে মৌমাছি বের হবে না। মধুও উৎপাদন করা যাবে না। ঠান্ডায় মৌমাছি না খেতে পেয়ে দুর্বল হয়ে যাবে। বেশি দিন থাকলে মারাও যেতে পারে।

তারা জানান, এক মাসে দুইবার মধু সংগ্রহ করেছি। ১৫০ মৌ বাক্স থেকে প্রথমবার ১০ মণ ও দ্বিতীয়বার ১৯ মণ মধু পাওয়া গেছে। শীতের তীব্রতা না বাড়লে ২০ মণের বেশি মধু উৎপাদন করা যেত। এক্ষেত্রে দ্রুত শীত না কমলে মধ্য সংগ্রহে তারা পিছিয়ে পড়বেন।

সদর উপজেলার গয়েশপুরের মৌচাষি জাহাঙ্গীর জানান, এ বছর সপ্তাহে মৌবক্স থেকে কেজি দুয়েক করে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। কিন্তু বুধবার শীত বাড়ায় সেটি কমে যায়। সবশেষ বৃহস্পতিবার থেকে অতিরিক্ত শীত ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে ২-৩ দিন ধরে মৌমাছিরা বেরই হয়নি। তবে আজ (রোববার) কিছুটা রোদ ওঠায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু মৌমাছি বের হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় ৪৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৯ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমি মৌচাষের আওতায় রয়েছে। জেলায় ১০ হাজার মৌবক্সের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এসব জমিতে ৬১ জন মৌচাষি ৭ হাজার ৫৮ টি মৌবক্স স্থাপন করে মধ্য সংগ্রহ করছেন। এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ১৭৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বিপরীতে মৌবক্সে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ কেজি। গতবছর জেলায় মধু উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৮ হাজার কেজি।

Advertisement

ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে মধু উৎপাদন শুরু করেছেন মৌচাষিরা। জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে জানিয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, শীত প্রকৃতিগত ব্যাপার। এটির ফলে আপাত সময়ে মধু চাষে একটু ব্যাঘাত ঘটলেও এর বিপরীতে লাভ বেশি। শীত বাড়লে সরিষার ফুল বেশি ফোটে, গাছ বড় ও মোটা হয় এবং এর পাশাপাশি ফুলে মধুর পরিমাণও বাড়তে থাকে। এদিক থেকে শীতের জন্য দুয়েকদিন মধ্য সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটলেও পরবর্তীতে চাষিরা অতিরিক্ত মধু সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আরো বেশি লাভবান হবেন। গতবছরের ন্যায় এবারও লক্ষ্যমাত্রার বেশি মধু উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/আরএইচ/জিকেএস