চলতি বিপিএলে ঢাকায় প্রথম পর্বের শেষ দুদিন ঘন কুয়াশায় চারপাশ ঘিরে থাকলেও মাঠের ক্রিকেট জৌলুস ও আকর্ষণ হারায়নি। তবে এবারের আসর শুরু থেকেই জমজমাট। শেরে বাংলায় প্রথম চার দিন মোটামুটি রান উৎসব চলেছে। শেষ দিকে রান কম হলেও আকর্ষণ কমেনি মোটেও।
Advertisement
ঢাকার প্রথম পর্ব শেষে নুরুল হাসান সোহানের রংপুর রাইডার্স ৩ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
বরাবরের মতো শেরে বাংলা এবার স্লো-নির্জীব, নিচু-বাউন্সি পিচ নেই। শুরু থেকেই উইকেটে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। বল ব্যাটে আসছে। বাউন্সও থাকছে ভালোই। যে কারণে শট খেলা যাচ্ছে। ব্যাটাররা ইচ্ছেমতো চটকদার ও বাহারি স্ট্রোক খেলতে পারছেন উইকেটের চারপাশে। চার-ছক্কার নহরও বয়ে গেছে প্রথম চার দিন।
ভালো উইকেটের কারণে স্কোরলাইনও ছিল বেশ বড়। গড়পড়তা ১৮০’র বেশি রান উঠেছে প্রতি ম্যাচে। চার দিনে একজোড়া সেঞ্চুরিও হয়েছে। রান উঠেছে শুনে এমনটি ভাববার কোনো কারণ নেই যে, উইকেটে বোলারদের কিছুই নেই। বাস্তবে বোলাররাও উইকেট থেকে ফায়দা পেয়েছেন।
Advertisement
তাসকিন আহমেদ এক ম্যাচে ৭ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন। আরেক দ্রুত গতির বোলার নাহিদ রানাও প্রতি ম্যাচের বাড়তি গতি সঞ্চারের পাশাপাশি সাফল্য পেয়েছেন। একইভাবে স্পিনার শেখ মেহেদীর বলও ঘুরছে। এই অফস্পিনার নতুন বলে বোলিং করে প্রতি ম্যাচে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন।
এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে সবচেয়ে সফল দুর্বার রাজশাহীর ওপেনার অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। ৩ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান রাজশাহী অধিনায়কের; ১৪৬ রান। প্রথম ২ ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো বিজয়ের এই আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোর অপরাজিত ৭৩। গড়ও ৭৩। স্ট্রাইকরেট ১৩৭.৭৩।
রান তোলায় শীর্ষে বাংলাদেশি থাকলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান বিদেশিদের।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন চিটাগং কিংসের ওপেনার উসমান খান। দুই ম্যাচে এ পাকিস্তানির সংগ্রহ ১৪১ রান। শেষ ম্যাচে শতক উপহার দেওয়া উসমানের সর্বোচ্চ ইনিংস ১২৩ রানে। গড় ৭০.৫০। স্ট্রাইকরেট ১৮৩.১১।
Advertisement
তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ক্রিকেটার মূলত একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তিনি শ্রীলঙ্কার সব ফরম্যাটে জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়া থিসারা পেরেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ঠিকই নিজেকে মেলে ধরেছেন। এবারের বিপিএলে ব্যাটার হিসেবেই বেশি নজর কেড়েছেন এ লঙ্কান অলরাউন্ডার।
ঢাকা ক্যাপিটালের হয়ে ৩ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরিসহ ১৪১ রান করেছেন পেরেরা। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ১০৩। গড় ৭০.৫০। স্ট্রাইকরেট ১৮৩.১১।
রান তোলায় চার নম্বর স্থানটি আরেক বাংলাদেশি ইয়াসির আলী রাব্বির। উদ্বোধনী ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে উইকেটের সামনে ও দুদিকে বাহারি শট খেলে মাঠে আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। মেধার পরিচয় দিয়েছেন রাজশাহীর এই তারকা। ইয়াসির আলীর ৩ ম্যাচে মোট রান ১৩২। সর্বোচ্চ ৯৪। গড় ৬৬.০০। স্ট্রাইকরেট ১৬০.৯৭।
তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন রংপুর রাইডার্সের সাইফ হাসান। ৩ ম্যাচে সাইফের সংগ্রহ ১০৬ রান। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি অপরাজিত ৬২। গড় ৫৩.০০। স্ট্রাইকরেট ১২৩.২৫।
ছয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ান বসিস্টো। ৩ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১০১।
৯৬ রান করে সপ্তম স্থানে আছেন রংপুর রাইডার্সের ইফতেখার আহমেদ। ২ ম্যাচে ৯১ রান করে অষ্টম স্থানে খুলনা টাইগার্সের মাহিদুল ইসলাম অংকন। নবম ও দশম স্থান যথাক্রমে চিটাগং কিংসের শামীম হোসেন (২ ম্যাচে ৮০) ও রাজশাহীর রায়ান বার্লের (৩ ম্যাচে ৭৪)।
মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান এবারের বিপিএলে নেই। যে কারণে দর্শক, অনুরাগী ও ভক্তদের চোখ তিন সিনিয়র তামিম ইকবাল মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ওপর স্থির হয়েছিল। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বাকি দুজন এখনো সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি।
একই অবস্থা লিটন দাসেরও। কাগজে-কলমে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটারের মাঠের পারফরম্যান্স বেশ খারাপ। ২ ম্যাচে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৩৩ রান। সর্বোচ্চ ৩১। বরিশাল অধিনায়ক তামিমের অবস্থাও একই রকম। দেশসেরা ওপেনার প্রথম ২ ম্যাচে করেছেন মোটে ৩৫। সর্বোচ্চ ইনিংস ২৮ রানের।
মুশফিকের ব্যাটের অবস্থা আরও খারাপ। ২ ম্যাচে রান মাত্র ২৮। সর্বোচ্চ ১৫। তবে মাহমুদুল্লাহ প্রথম ম্যাচেই নজর কেড়েছেন। রাজশাহীর বিপক্ষে উদ্বােধনী দিন ডানহাতি অভিজ্ঞ তারকার ব্যাট থেকে আসা ৫৬ রানের দারুণ ইনিংসটি ফরচুন বরিশালের জয়ে রাখে বড় ভূমিকা।
এআরবি/এমএইচ/জেআইএম