ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা। তার মৃত্যতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। দর্শকনন্দিত নায়িকা শাবনূরও তার চলে যাওয়ার খবরে ব্যথিত হয়েছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাকে ভীষণ পছন্দ করতেন অঞ্জনা।
Advertisement
কিছুদিন আগেও শাবনূরের জন্মদিনে একটি অঞ্জনা তার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এতে শাবনূরকে শিশির স্নাত নায়িকা বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই স্মৃতির কথা উল্লেখ করে শাবনূর অঞ্জনার মৃত্যুর খবর জেনে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমার অগ্রজ সহকর্মী, জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ও নৃত্যশিল্পী শ্রদ্ধেয় অঞ্জনা রহমান আর আমাদের মাঝে নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)।’
শাবনূরের জন্মদিনে অঞ্জনার পোস্টের কথা জানিয়ে শাবনূর লেখেন, ‘এইতো মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আমার জন্মদিনে, আমাদের দুজনের একসাথে তোলা কিছু ছবি দিয়ে উইশ করে তিনি তার ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলেন, “শুভ জন্মদিন, আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত, শীর্ষস্থানীয় এক মহাতারকা ৮০ দশকের পর সিনেপ্রেমী দর্শকদের মাঝে যখন একঘেঁয়েমি বিষণ্নতা ভর করেছিল। তখন যে কয়েকজন লাস্যময়ী সুন্দরী জননন্দিত নায়িকার আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে শাবনূর শিশির স্নাত অনন্য একজন। অনেক ভালোবাসা ও নিরন্তর শুভ কামনা সব সময় তোমার জন্য”। আমাদের সবার প্রিয় অঞ্জনা আপার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা গুণী এই শিল্পীর অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।’
অঞ্জনা ৩ জানুয়ারি দিনগত রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। রাত আনুমানিক ১টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
Advertisement
অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। বাংলাদেশ ছাড়াও অভিনয় করেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়। জীবদ্দশায় নিজেই সেকথা বলে গেছেন অভিনেত্রী। সে এক রঙিন অতীত ছিল তার।
অঞ্জনা অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘মাটির মায়া’, আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘চোখের মণি’ ও ‘সুখের সংসার’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’ ও ‘আনারকলি’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘বিচারপতি’, শফি বিক্রমপুরীর ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, নায়করাজ রাজ্জাকের ‘অভিযান’, আলমগীর কুমকুমের ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, এফ আই মানিকের ‘বিস্ফোরণ’, আজিজুর রহমানের ‘ফুলেশ্বরী’, সত্য সাহার ‘রাম রহিম জন’, মতিউর রহমান বাদলের ‘নাগিনা’, আলমগীর কবিরের ‘পরীণিতা’।
নায়িকা অঞ্জনার প্রথম সিনেমা ‘দস্যু বনহুর’ ছিল সুপারহিট। এ ছবির পর তাকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক, বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন অঞ্জনা। জ্বর এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ওষুধেও কাজ হচ্ছিল না। হাসপাতালে নেওয়া ও কয়েকটি পরীক্ষার পর জানা যায় তার রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে দেখভাল করছিলেন সন্তানস্নেহে আগলে রাখা নিশাত মনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর মেয়ে-জামাই কামরুল আলম রিপন জাগো নিউজকে জানান, অঞ্জনার ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
Advertisement
অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। সেসময় তিনি মুসলমান হন। জানা গেছে, অঞ্জনার মরদেহ আজ (৪ জানুয়ারি) শনিবার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এমএমএফ/এএসএম