প্রবাস

গণতন্ত্রের নতুন দিগন্তে এগিয়ে চলো বাংলাদেশ

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ–আশা থেকে হতাশা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে জাতি আশা করেছিল একটি উন্নত, ন্যায্য এবং সুশাসিত রাষ্ট্রের। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে অস্থিরতার শিকার হয়।

Advertisement

• একনায়কতন্ত্রের প্রবর্তনবঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের প্রথম একদলীয় শাসনব্যবস্থা। জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস পায় এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা বাধাগ্রস্ত হয়।

• স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতির সূচনাবঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়, যা দেশের আর্থিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল।

• ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডশেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হয়। এই ঘটনার পর দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যাত্রা শুরু হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে জাতিকে বিভক্ত করে।

Advertisement

সামরিক শাসন–জিয়া ও এরশাদের অস্থিরতা

বঙ্গবন্ধুর শাসনের পতনের পর বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়।

• জিয়াউর রহমানের শাসনজিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশে এক নতুন সংকটের সৃষ্টি করেন। তার আমলে রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা দেখা যায়।

• এরশাদের সামরিক শাসনএরশাদ দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসন চালিয়ে যান। তার শাসনামলে ভোটচুরি, দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক অদক্ষতা দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।

গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন–শেখ হাসিনার উত্থান

এরশাদের শাসনের পর দেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন ঘটে।• শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন:ভারতে দীর্ঘ রাজনৈতিক আশ্রয় শেষে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের মতো প্রকল্পগুলো দেশের অবকাঠামোগত অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আড়ালে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা দেশকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

১. বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম

শেখ হাসিনার সরকারের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং বেআইনি গ্রেফতার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

• র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং পুলিশের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের অপহরণ এবং গুমের ঘটনা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়েছে।

• আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

• এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ

সরকার গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

• ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০১৮)-এর অপব্যবহার করে সাংবাদিক এবং লেখকদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।• বহু সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যারা সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার ছিল।• বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য সাংবাদিকদের হয়রানি, গ্রেফতার এবং এমনকি দেশ ছাড়তে বাধ্য করার উদাহরণ রয়েছে।

৩. বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত নিশ্চিহ্ন করার নীতিতে সরকার কাজ করেছে।• বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমকে দমন করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।• বড় ধরনের জনসমাবেশে বাধা দেওয়া, মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা এবং কারাগারে প্রেরণ করার ঘটনা প্রায়ই দেখা গেছে।• সরকার-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী রাজনীতিকে দমন করার জন্য নিরন্তর কাজ করেছে।

৪. দুর্নীতি ও অর্থ পাচার

শেখ হাসিনার শাসনে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।• রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগে বড় পরিমাণ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।• দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং সরকার সমর্থিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।• গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (GFI) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।

৫. একতরফা স্বৈরাচারী শাসন

শেখ হাসিনার সরকার একতরফাভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।• নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।• ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি এবং সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে।• প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিরপেক্ষতার বদলে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য হয়েছেন।

৬. প্রশাসনের পতন ও প্রভাব

সরকার প্রশাসনকে নিরপেক্ষতার পরিবর্তে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।• পুলিশ, র্যাব এবং অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান সরাসরি দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার হয়েছে।• এর ফলে প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উন্নয়ন ও দমন-পীড়নের সমান্তরাল বাস্তবতা

শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও সেই উন্নয়ন ভারসাম্যহীন এবং গণতন্ত্রের ঘাটতিতে ভরা।• অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেশের আর্থিক উন্নতির প্রতীক হলেও, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি এবং দমন-পীড়নের ঘটনা তা ছাপিয়ে গেছে।• গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ হুমকিস্বরূপে রূপান্তরিত হয়।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরশাসনের পতন

শেখ হাসিনার শাসনকালের শেষ দিকে ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গণআন্দোলন শুরু হয়।অর্থনৈতিক বৈষম্য, দমনমূলক শাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার শাসনের পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়।

এই আলোচনায় এক অংশ থেকে দাবি ওঠে, আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি রাজনীতি থেকে বাদ দিয়ে একটি নতুন কাঠামো তৈরি করার। তবে এই পরিকল্পনার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।

১. ঐতিহাসিক পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয় এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালে তাদের শাসনের পতন ঘটে। কিন্তু তাদের রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি।

• একইভাবে, জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও তাদের পুনরায় রাজনৈতিক শক্তি অর্জনের ঘটনা প্রমাণ করে, একটি বড় রাজনৈতিক দলকে পুরোপুরি বাদ দিলে তারা নতুন রূপে ফিরে আসার সুযোগ খুঁজে নেয়।• যদি আওয়ামী লীগকেও পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের বিপুল সমর্থকগোষ্ঠী বিকল্প পথে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

২. সমর্থন ভিত্তি ও বাস্তবতা

আওয়ামী লীগ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর একটি।• তাদের প্রতি দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠীর আস্থা রয়েছে।• দলটির একচেটিয়া দমন নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং গণতন্ত্রের প্রকৃত মূল্যায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

৩. আন্তর্জাতিক প্রভাব ও কূটনৈতিক বাস্তবতা

যদি আওয়ামী লীগকে টোটালি বাদ দেওয়ার মাধ্যমে সংস্কারের চেষ্টা চালানো হয়, তবে এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া পড়বে।• প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে।• বাংলাদেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হলে তা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে।

৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি বাদ দিলে বৃহৎ সমর্থনশীল একটি দলকে উপেক্ষা করা হবে, যা জাতীয় ঐক্য এবং স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

৫. পথ খুঁজে পাওয়ার বিকল্প উপায়

• আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ বিচার এবং দলীয় সংস্কারের জন্য চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন।• দলটির মধ্য থেকে সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব বের করে এনে তাদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা উচিত।

১. অতীত থেকে শিক্ষা: প্রতিহিংসার রাজনীতির ফলাফল

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে জামায়াতে ইসলামির মতো দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।• এই দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল এবং তাদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সে সময় যৌক্তিক মনে হয়েছিল।• কিন্তু, নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে তাদের নির্মূল করা যায়নি; বরং তারা নতুন নামে ফিরে আসে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।• একইভাবে, আওয়ামী লীগকে বাদ দিলে তাদের বিরোধী মনোভাব আরও কঠোর হবে এবং রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

২. একটি বড় অংশের জনগণকে উপেক্ষা করা

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।• তারা দেশের একটি বড় অংশের জনগণের সমর্থন পেয়ে এসেছে, যা প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে।• আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি বাদ দিলে, এদের সমর্থকরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠবে এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।• একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের মূলনীতি হলো সব পক্ষকে জায়গা দেওয়া।

আরও পড়ুন:

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়: একটি সুষম বিশ্লেষণ ৩. শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

আওয়ামী লীগকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটি একটি বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া একটি কার্যকর গণতন্ত্রের সুষ্ঠু কর্মকাণ্ড অসম্ভব। গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত হলো একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকর বিরোধী দল, যা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পারে।• যদি কোনো রাজনৈতিক দল দেশের শাসনব্যবস্থার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বিরোধী দলকে নির্বাসিত করে, তাহলে গণতন্ত্রের মূল চেতনা লুপ্ত হয়ে যাবে।

• শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যদি দলটি পুরোপুরি রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে সেটা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করতে পারে।• এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একদলীয় শাসন কিংবা সামরিক শাসনের সম্ভাবনা বাড়বে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৪. মানবাধিকার ও আইনের শাসন

রাজনৈতিক বিরোধী দল এবং সমালোচকদের দমন-পীড়ন শুধু একটি দলীয় সুবিধার জন্য নয় বরং পুরো দেশের মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।• বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোয় দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।• সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার কার্যকর করতে হবে, পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমালোচনা করার সুযোগ রাখতে হবে।• একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুক্তিসম্পন্ন সমালোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

৫. জনগণের অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা

একটি দেশের রাজনৈতিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা।• জনগণ যেন সহজে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।• সরকারকে মানুষের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে এবং কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে শুধু তার মতামত প্রকাশের জন্য দমন করা উচিত নয়।• রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাংলাদেশে একটি সুস্থ গণতন্ত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

৬. জনগণের রায় ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তন

গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণের রায়।• নির্বাচন, সমাবেশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মাধ্যমে জনগণ সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব প্রকাশ করে।• যদি আওয়ামী লীগ বা কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন হারায়, তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই দলকে পরিবর্তিত করার সুযোগ জনগণের রয়েছে।• রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে পারে, কিন্তু তা যদি জনগণের রায়েই না হয়, তবে সেটি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হবে।

উপসংহার: রাজনৈতিক সমঝোতা ও সংস্কারের প্রয়োজন

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের কারণে নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এক বড় সংকট তৈরি হয়েছে।তবে রাজনৈতিক সমঝোতা ও সংস্কারের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব।• একটি কার্যকর এবং সুশাসিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে, সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার পথ খোলা থাকতে হবে।• রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দুর্নীতি এবং এককেন্দ্রিক শাসনের পরিবর্তে একতাবদ্ধ সমাজ গঠন করতে হবে, যেখানে সব জনগণ এবং রাজনৈতিক দল তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অধিকার ভোগ করতে পারে।• গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।• একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য এবং জনগণের সমর্থনেই দেশকে উন্নতি ও শান্তির পথে এগিয়ে নিতে হবে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)Rahman.Mridha@gmail.com

এমআরএম/এমএস