যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলারের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা চুরি যাওয়ার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আরো ১৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাকি অর্থ কীভাবে আসবে, আদৌ আসবে কি না, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্টরা। রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। কমিটি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার পরামর্শ দেয়া হয়। ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভের টাকা চুরি যাওয়ার পর মার্চের শেষে ও এপ্রিলের শুরুতে দুই দফায় কিছু টাকা ফেরত দেন ফিলিপাইনের ক্যাসিনো জাঙ্কেট অপারেটর কিম অং। বাংলাদেশের যে টাকা চুরি যায় তা শ্রীলঙ্কায় এবং ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকটি ক্যাসিনোতে যায়। মার্চে ফিলিপাইন সিনেটের প্রেসিডেন্ট প্রো টেম্পর রালফ রেকটো বলেছিলেন, ফিলিপাইনে পাচার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ৪০ ভাগ অর্থ (৩৪ মিলিয়ন) সরকার উদ্ধার করতে পারবে।রিজার্ভ চুরির বিষয়টি ছাড়াও বৈঠকে ব্যাংক রিজার্ভ ও আমানতের নিরাপত্তা এবং জালিয়াতি প্রতিরোধে করণীয়, বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ইন্টারেস্ট রেট স্প্রিডের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এরআগে গত ১০ মে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার নেপথ্যে থেকে কারা কলকাঠি নেড়েছেন, তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেয়া হয়। আজকের বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অফশোর ব্যাংকিংয়ের সার্বিক ঝুঁকি হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে মুক্ত ও সহজ অফশোর ব্যাংকিং সুবিধার সার্বিক সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।কমিটির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, টিপু মুন্সি, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং আখতার জাহান অংশ নেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা থেকে ৮শ কোটি টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ফিলিপাইনের একটি সংবাদ মাধ্যমে তা ফাঁস করে দেয়। মূলত ফিলিপাইনের কয়েকটি ক্যাসিনোর মাধ্যমে এ টাকা পাচার করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশে ফাঁস হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, চুরি যাওয়া অর্থের কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ফিলিপাইনের অর্থ পাচারবিরোধী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে বাকি অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।এইচএস/এনএফ/পিআর
Advertisement