ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী মানুষেরা স্বভাবতই নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকে। এক্সটোভার্ট বা বহির্মুখী মানুষের মতো তারা সরব নয়, তবে ইন্ট্রোভার্টরা বরাবরই নানা গুণে গুণান্বিত হন, বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
Advertisement
ইন্ট্রোভার্টরা সহজে কারও সঙ্গে মিশতে চান না বা পারেন না। ফলে অনেকেই তাদেরকে অহংকারী বলে ভেবে নেন। আবার তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা লোকজনের মধ্যেও যেতে পছন্দ করেন না। ফলে অসামাজিক মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হন।
আসলে ইন্ট্রোভার্টরা গুটিকয়েক মানুষের সাহচর্যে থাকতেই পছন্দ করেন। তবে এ ধরনের মানুষদেরকে একদমই বোকা ভাববেন না কিংবা অবজ্ঞা করবে না। কারণ সৃজনশীলতা কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এরা অনেক সময়ই এক্সটোভার্ট বা বহির্মুখীদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।
‘ইন্ট্রোভার্টেড লিডার: বিল্ডিং অন ইওর কুইট স্ট্রেংথ’ এর লেখক ড. জেনিফার কানওয়েলারের মতে, ‘অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা একা সময় কাটানোর মাধ্যমে শক্তি পান। এটা অনেকটা ব্যাটারির মতো যে, তারা রিচার্জ করে। এরপর তারা মানুষের সঙ্গে সত্যিই সুন্দরভাবে সংযোগ করতে পারে।’
Advertisement
আজ কিন্তু অন্তর্মুখী মানুষের দিন, অর্থাৎ ‘ওয়ার্ল্ড ইন্ট্রোভার্ট ডে’। প্রতিবছর ২ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী অন্তর্মুখী দিবস উদযাপন করা হয়। এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো, অন্তর্মুখী মানুষদেরকে অবজ্ঞা না করা ও তাদের সৃজনশীলতার যথাযথ প্রশংসা করা।
বিশ্ব অন্তর্মুখী দিবসের ইতিহাসঅন্তর্মুখীরা শান্ত পরিবেশ ও একাকিত্ব উপভোগ করেন। নিজেকে নিয়ে ও তার পছন্দের মানুষদের সঙ্গে থাকতেই তারা পছন্দ করেন। সুইস মনোচিকিৎসক কার্ল গুস্তাভ জং প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যিনি একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্মুখিতাকে একটি ধারণা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।
১৯২১ সালে তার বই, ‘সাইকোলজিক্যাল টাইপস’এ তিনি তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে, প্রতিটি মানুষ দুটি বিভাগে পড়ে- অন্তর্মুখী বা বহির্মুখী। তিনি অন্তর্মুখীকে প্রাচীন গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি দাবি করেছিলেন, অন্তর্মুখীরা প্রতিফলন, স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গির অভ্যন্তরীণ জগতের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ফলে অন্যদের ক্রিয়াকলাপে যোগদানের আগ্রহ কম বোধ করে তারা। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য মনোবিজ্ঞানীরাও অন্তর্মুখী মানুষদের সম্পর্কে আরও বিস্তৃত তত্ত্ব তৈরি করেছেন।
Advertisement
তারই ধারাবাহিকতায় ‘বিশ্ব অন্তর্মুখী দিবস’র প্রচলন শুরু হয় জনপ্রিয় জার্মান মনোবিজ্ঞানী ও লেখক ফেলিসিটাস হেইনের মাধ্যমে। ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হেইন তার ওয়েবসাইট ‘আইপারসোনিক’ এ ‘কেন আমাদের বিশ্ব ইন্ট্রোভার্ট ডে পালন করা উচিত’ শিরোনামে একটি ব্লগ পোস্ট লেখেন। নিবন্ধনটিই এই দিবস প্রচলনের সূচনা ঘটায়।
আরও পড়ুন হাত-পা সব সময় ঠান্ডা থাকে, কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো? কমলালেবুর খোসা খেলে শরীরে যা ঘটে ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তরমুখীদের বৈশিষ্ট্য কী? একা সময় কাটানোইন্ট্রোভার্টরা নিজের একাকিত্বকে উপভোগ করেন। এমনকি ছুটির দিনেও বাসায় শুয়ে-বসে অলস দিন কাটাতেই পছন্দ করেন তারা। ঘরে বসে টিভি দেখা, বই পড়া, আঁকা-আঁকি কিংবা ঘরের কাজকর্মে দিন কাটাতেই তাদের বেশি ভালো লাগে।
হৈ-হুল্লোড় পছন্দ নয়কোনো ধরনের উৎসব বা অনুষ্ঠানে ইন্ট্রোভার্টরা থাকতে অস্বস্তিবোধ করেন। আর গেলেও তারা হয়তো বেশিরভাগ সময়ই অনুষ্ঠানের কোনো এক কোনে বসে থেকে অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফেরে।
কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেইন্ট্রোভার্টদের মনে এক আলাদা ব্যক্তিসত্ত্বা বাস করে, যে সব সময় এদের মনে ভীতির সঞ্চার করে। কোনো সৃজনশীল কাজের চিন্তা মাথায় এলেই তার অন্তর্বাসী সত্ত্বাটি বলে দেয়, ‘তুমি কাজটি পারবে না’। এতে কাজের উৎসাহ হারায় তারা।
সহজে কারও সঙ্গে মিশতে পারে নাইন্ট্রোভার্টদের প্রধান সমস্যা, এরা খুব সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারে না। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই কিন্তু ভালো চিন্তাবিদ, কিংবা বেশ বুদ্ধিমান হন। এরা খুব ভালো শ্রোতা হতে পারে, তবে সবার সামনে বক্তৃতা দিতে তারা অস্বস্তিবোধ করেন।
অনেক মানুষের ভিড়েও একাতিত্ব বোধ করেনঅনেক মানুষের ভিড়েও অন্তরমুখীরা একাকিত্ব বোধ করেন। কারণ বেশি ভিড় বা লোক সমাগমে ঘাবড়ে ওঠেন তারা। ফলে জনতার মাঝেও সে একাই থেকে যায়। এই ভিড়ের চেয়ে তারা কাছে নিজের ঘরে বসে একাকী সময় কাটানোই সহজতর মনে হয় ইন্ট্রোভার্টদের।
অপরিচিতদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারে নাঅপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজ থেকে আলাপ করতে সংকোচবোধ করেন ইন্ট্রোভার্টরা। এমনকি এরা পরিচিতদের সঙ্গেও কম কথা বলায় অভ্যস্ত। অনেকেই এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন, তবে সংকোচবোধের কারণে তারা সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না।
সূত্র: ন্যাশনাল টুডে
জেএমএস/জিকেএস