অর্থনীতি

এখনো চলছে স্টল নির্মাণের কাজ, ক্রেতার আনাগোনা কম

রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৫। তবে, এখনো চলছে বেশিরভাগ স্টল, প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ। স্টলের নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও শুরু হয়েছে বেচাবিক্রি। তবে, শীত উপেক্ষা করে মানুষজন এলেও আশানুরূপ ক্রেতার সমাগম হচ্ছে না।

Advertisement

বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে পূর্বাচলে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর মেলা সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

এদিকে, দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় আসতে পারেন, সেজন্য বিআরটিসির ২০০ শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। যা ফার্মগেট, কুড়িল থেকে বাণিজ্যমেলায় চলাচল করবে। এছাড়া মেলায় পার্কিং, নামাজ, শিশুদের খেলার জায়গা, তথ্যকেন্দ্র, রপ্তানি বহুমুখীকরণ কেন্দ্র রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী থেকে বছরব্যাপী বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা স্টলের ব্যবস্থা থাকবে।

Advertisement

প্রথমবারের মত মেলার টিকিট অনলাইনে কাটা যাবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের নিচে ২৫ টাকা।

মেলায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) স্টলে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছেন প্রি-টু-প্রো’র স্বত্বাধিকারী নাসরিন আক্তার সুমি এবং তার বোন নিশাত জাহান। নিশাত জাহান জাগো নিউজকে বলেন, এ ব্যবসার উদ্যোগ আমার বড় বোনের। আমরা বেইলি রোড থেকে এসেছি। আমাদের ফেসবুক পেজ আছে, কিন্তু দোকান নেই। বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে হ্যান্ডব্যাগ, কলমদানি, জুয়েলারি বক্স, স্ট্যান্ড আছে। এছাড়া হ্যান্ড প্রিন্ট ব্লাউজ, খাদি কাপড়ের বিছানার চাদর, কাতান কাপড়ের শাড়ি, মাটির তৈজসপত্র আছে। এসব পণ্য আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের। আশা করছি বিক্রি ভালো হবে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের স্টলে ব্যাগ বাজারের স্বত্বাধিকারী তাহমিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সব পণ্য পাটের তৈরি। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছি। আমাদের কাছে পাটের তৈরি জুতা, ব্যাগসহ সব ধরনের পণ্য আছে। আমরা পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ বিক্রি করছি। আকারভেদে দাম ২০-৪০ টাকা।

Advertisement

আরও পড়ুন

ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি বছর ধরে চলবে বাণিজ্যমেলায় ই-টিকেটিং সেবা চালু

তিনি বলেন, আজ প্রথমদিন। আমাদের সব পণ্য এখনো আসেনি, যা আসছে এখনো ডিসপ্লে করছি। আশা করছি এবারের মেলায় ভালো ব্যবসা করতে পারবো। প্রথমদিন মেলায় সেভাবে দর্শনার্থী আসেনি। আবহাওয়াও একটু ঠান্ডা। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি।

সপরিবারে মেলায় ঘুরতে এসেছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা কেরানীগঞ্জ থেকে সপরিবারে এসেছি। যাতায়াত আরও সহজ হলে মেলায় মানুষের সমাগম বাড়বে।

এবারের মেলার মূল আকর্ষণ জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেরণায় নির্মিত ‘তারুণ্য চত্বর’, ‘জুলাই চত্বর’ ও ‘৩৬ জুলাই চত্বর’। মেলায় দর্শনার্থী জহিরুল বলেন, জুলাই আমাদের প্রেরণা। মেলা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ, জুলাই অভ্যুত্থান এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য।

নাদিয়া ফার্নিচারের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা শুরু হয়, তখন থেকেই মেলা আগের মতো জমছে না। প্রথম ৫-৭ দিন আমাদের কোনো বিক্রি হয় না। কারণ কাস্টমার কম। মূল শহর থেকে অনেক দূরে, যাতায়াতও সহজ না। যারা এখানে আসে তাদের বেশির ভাগের নিজেদের গাড়ি আছে।

আরও পড়ুন

বাণিজ্যমেলায় থাকবে বিআরটিসির দুই শতাধিক বাস, উবারে ৫০ শতাংশ ছাড় বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি, ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা

ভিশন এম্পোরিয়ামের এরিয়া সেলস ম্যানেজার ইয়াসির রনি বলেন, প্রথমে আমাদের স্টল পেতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। ফলে এখনো সব পণ্য গুছিয়ে উঠতে পারিনি। এছাড়া আমাদের প্যাভিলিয়নও ছোট। তাই বেসিক যে পণ্য আছে যেমন ফ্রিজ, টিভি, ফ্যান ও এসি ইত্যাদি। আশা করছি আজকের মধ্যে সব গুছিয়ে উঠতে পারবো।

মেলায় রুটি মেকার ও চপিং আইটেমের স্টল দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী মো. ওয়াসিম। ওয়াসিম বলেন, আমি ২০১৪ সাল থেকে মেলায় অংশ নিচ্ছি। ঢাকায় যখন মেলা হতো তখন ভালো বিক্রি করতাম। এখানে তেমন বিক্রি হয় না।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং অন্য বিষয় নিয়ে কথা হলে রূপগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল আলম বলেন, মেলা শুরুর আগে রাস্তার সামনে কিছু অবৈধ স্থাপনা ছিল, সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জেলা প্রশাসন সর্বদা সজাগ। পাশাপাশি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ করছি।

এসআরএস/এমএএইচ/এমএস