আইন-আদালত

অসদাচরণের ৩৩ অভিযোগ, বিচারকের ১২ ও কমকর্তা-কর্মচারীদের ১৫

বিচারবিভাগে বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুস, কাজে অবহেলা, অসদাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কিত ৩৩টি অভিযোগ এসেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনের কাছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে ১২টি, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তিনটি, জেলা আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১২টি এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন সেবা চালু হওয়ার পর গত তিন মাসে এসব অভিযোগ আসে হটলাইনে। বুধবার (১ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান।

বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্ট বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট হেল্প লাইন সেবা চালু করে।

মূলত সুপ্রিম কোর্টে আগত কোনো বিচারপ্রার্থী বা সেবাগ্রহীতা সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কোনো শাখায় সেবা গ্রহণে যে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে বা সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে অসুবিধার মুখোমুখি হলে উক্ত সেবাগ্রহীতাকে সহায়তা করার নিমিত্ত হেল্পলাইন নম্বরটি চালু করা হয়। হেল্পলাইন নম্বরটি চালু হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে আগত যে কোনো সেবাগ্রহীতা সরাসরি ফোন কল অথবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সুপ্রিম কোর্টে সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সেবা গ্রহণে সম্মুখীন কোনো প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

Advertisement

সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতি রোববার হতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৪টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির একজন কর্মকর্তা উক্ত হেল্পলাইন পরিচালনা করেন এবং সেবাগ্রহীতাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।

হেল্পলাইন নম্বরটি চালু হওয়ার পর প্রতি মাসে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টে সারাদেশ থেকে আগত আইনি পরামর্শ, মামলা সম্পর্কিত তথ্য ও অভিযোগ দাখিল এবং উক্ত অভিযোগ দাখিল ও মামলা সম্পর্কিত পরামর্শ চাওয়ার বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

আজ (১ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন সেবা চালু হওয়ার তিন মাস পার হওয়ার পর দেখা যায় যে, এ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে আগত আইনি পরামর্শ, মামলা সম্পর্কিত তথ্য ও অভিযোগ দাখিল সংক্রান্ত মোট ১০০৩টি কল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইনি পরামর্শ সেবা গ্রহণের নিমিত্ত ৬০৪টি কল আসে। এছাড়া বিভিন্ন মামলার তথ্য জানতে চেয়ে কল আসে ৩৪৪টি। এসব কলের সবগুলো তথ্যই সেবাগ্রহীতাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুস, কাজে অবহেলা, বিলম্বে সেবা প্রাপ্তি, অসদাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিগত দুই মাসে মোট ৫৫টি অভিযোগ আসে। যার মধ্যে বিলম্বে আইনি সেবা প্রাপ্তি সংক্রান্ত অভিযোগ আসে ২২টি।

সব অভিযোগ সম্পর্কিত সেবাসমূহ এরই মধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুস, কাজে অবহেলা, অসদাচরণ ইত্যাদি সম্পর্কিত ৩৩টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে ১২টি, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৩টি, জেলা আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১২টি এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ আসে।

Advertisement

উক্ত অভিযোগ সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত এরই মধ্যে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিগত ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সব কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য সেবা সহজীকরণসহ সুপ্রিম কোর্টের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেশাগত কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে ১২ দফা নির্দেশনা দেন।

১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা দেওয়া নিশ্চিতকরণ, পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো আর্থিক লেনদেন বর্জন, সেবা দানে অহেতুক বিলম্ব পরিহার, সেবাগ্রহীতার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন, প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করা, কর্মকর্তাগণ কর্তৃক প্রতিদিন শাখা পরিদর্শন, ব্যতিক্রমহীনভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো রয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় বিচারপ্রার্থী জনগণের সুবিধার্থে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা কর্তৃক প্রদত্ত সেবাসমূহ নিশ্চিতকরণ ও সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে হেল্পলাইন চালুর এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস