জাতীয়

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ ও নির্যাতনে ১১৩ শ্রমিক নিহত

বিদায়ী ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ ও নির্যাতনে ১১৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) ওই জরিপে বলা হয়, ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৭০৫ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ২৭৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। এছাড়া নিহতদের মধ্যে রিকশা শ্রমিক ৪৩ জন, প্রবাসী শ্রমিক ৩৮ জন, দিনমজুর ৩২ জন, বিদ্যুৎ খাতে ২২ জন, মৎস্য শ্রমিক ১৯ জন, জাহাজ ভাঙা শিল্পের ৯ জন, স্টিলমিলে ৯ জন, নৌপরিবহন খাতে ৮ জন, অক্সিজেন ফ্যাক্টরিতে ৭ জন, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ৬ জন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ৫ জন, রাইস মিলে ৫ জন, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপের ৫ জন, মুদি দোকানের ৫ কর্মচারী এবং অন্যান্য খাতের ২৭ জন শ্রমিক নিহত হন।

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা

২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২৯২ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ২৯২ জনই পুরুষ শ্রমিক। সর্বোচ্চ ৪৭ জন মৎস্য শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবহন খাতে ৪১ জন আহত হন। তৃতীয় সর্বোচ্চ নির্মাণ খাতে ২৭ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া অক্সিজেন কারখানায় ২৪ জন, নৌপরিবহন খাতে ২৩ জন, দিনমজুর ২০ জন, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ১৮ জন, তৈরি পোশাক শিল্পে ১৬ জন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ১৩ জন, পেপার মিলে ১১ জন, দোকানে কর্মচারী ১০ জন, কৃষিতে ৯ জন, ভোজ্যতেল ফ্যাক্টরিতে ৬ জন, জাহাজ ভাঙায় ৬ জন, বিদ্যুৎ খাতে ৫ জন এবং অন্যান্য খাতে ১৬ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া ৫৫ জন শ্রমিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ হন, যার মধ্যে অধিকাংশই মৎস্য শ্রমিক।

সড়ক দুর্ঘটনা, দেয়াল/ছাদ ধসে পড়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বজ্রপাত, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, বিস্ফোরণ, সমুদ্রে ঘূর্নিঝড়ে, নৌকা/ট্রলার ডুবি, বন্যপশুর আক্রমণ ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

Advertisement

কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন

সংবাদপত্র ভিত্তিক জরিপ অনুযায়ী ২০২৪ সালে ২২৯ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১১৩ জন নিহত, ১০০ জন আহত, ১৫ জন নিখোঁজ, ১ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নির্যাতিতদের মধ্যে ১৯৩ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন ছিলেন নারী শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন ৪৪ জন অটোরিকশা শ্রমিক, যার মধ্যে ৪৩ জন নিহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন তৈরি পোশাক শিল্প খাতে। যার মধ্যে ৫ জন নিহত ও ২৯ জন আহত হন ও ১ জন আত্মহত্যা করেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ জন পরিবহন খাতে নির্যাতনের শিকার হন। যার মধ্যে ২০ জন নিহত, ৪ জন আহত ও ১ জন নিখোঁজ হন। এছাড়া ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৮ জন আহত । ১৯ জন কৃষি খাতে নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ৫ জন নিহত ও ১৪ জন অপহৃত হন। অপহৃতদের মধ্যে ৫ জন উদ্ধার ও ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৭ জন সংবাদকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ২ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হন। এ ছাড়া ১৪ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ৭ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হন।

কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি।

প্রতিবছর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্র ভিত্তিক বিআইএলএস জরিপ শীর্ষক প্রতিবেদন তৈরি করে।

এবারের জরিপে ১৩ টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে দুর্ঘটনা ও নির্যাতন সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত তথ্য পরবর্তীতে হালনাগাদ করে বিআইএলএস এর ওয়েবসাইটে জানুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে এটি প্রকাশ করা হবে।

Advertisement

এসইউজে/এএমএ/এমএস