দেশজুড়ে

বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল ক্রেতা

বগুড়ার বাজারগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতারা দারুণ ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ অসহায় বোধ করছেন।

Advertisement

বগুড়া রাজাবাজারে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭২ টাকা হলেও খুচরা বাজারে এটি ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ বোতলের গায়ে লেখা দাম ১৭৫ টাকা। ২ লিটার বোতলের পাইকারি দাম ৩৪৫ টাকা, যা খুচরা বাজারে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটার বোতলের ক্ষেত্রে পাইকারি দাম ৮৪৫ টাকা। তবে খুচরা বিক্রেতারা তা ৮৬০ থেকে ৮৭০ টাকায় বিক্রি করছেন।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেক দোকানদারই বাজারের সংকটকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা নিচ্ছেন।

বাজারে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহও অপ্রতুল। ক্রেতাদের অভিযোগ, তেল কিনতে গেলে বিক্রেতারা তাদের সঙ্গে অন্য পণ্যও কিনতে বাধ্য করছেন। এই চর্চা বিশেষত বড় কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সয়াবিন তেলের অর্ডার করলে সঙ্গে কম চাহিদাসম্পন্ন পণ্য কিনে নেওয়ার শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। এটি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং সরাসরি প্রতারণার শামিল।

Advertisement

প্যাকেটজাত পলিথিনে সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে। পাইকারি ক্রয়মূল্য ১৬৫ টাকা হলেও খুচরা বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। অন্যদিকে খোলা তেলের বাজারে তেমন সংকট না থাকলেও দাম এখনও উচ্চ। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৫ টাকা। সরিষার তেলের দাম ১৮০ টাকা লিটার। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়।

সরিষার তেলের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও, সয়াবিন তেলের সংকট ও চাহিদা বাড়ায় খোলা তেলের দামও ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে।

বগুড়ার বাজারে সরবরাহ ঘাটতির পেছনে অসাধু ব্যবসায়িক কৌশল কাজ করছে বলে অনেকে মনে করছেন। সরবরাহ সীমিত করে ইচ্ছাকৃতভাবে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চলছে।

কিছু ব্যবসায়ী সরাসরি অভিযোগ করেছেন, কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো সরবরাহ সীমিত রাখছে। এ ধরনের কার্যক্রম বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এবং ভোক্তাদের জিম্মি করছে।

Advertisement

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। সম্প্রতি, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করার দায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে এই ধরনের অভিযান আরও ব্যাপকভাবে পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে।

বাজারের এই পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। যেসব পরিবার দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য সরাসরি খুচরা বাজারের ওপর নির্ভরশীল, তারা প্রতিদিনের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী এক ক্রেতা বলেন, এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম এক মাসের মধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে। নির্ধারিত দামে তেল পাওয়াতো দূরের কথা, যা পাওয়া যায় সেটাও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। ভোক্তাদের সুবিধার্থে সরকারকে দ্রুত টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে তেল সরবরাহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।

সামাজিক সংগঠন সুপ্রর সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, সয়াবিন তেলের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রভাব ফেলছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়ালে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় প্রশাসনকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

বগুড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য বাজারে মনিটরিং চলছে। দ্রুতই সমস্যা কেটে যাবে।

এফএ/এমএস