ভ্রমণ

একদিনেই ঘুরে আসুন রামগড় চা বাগানে

আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি সড়ক। দু’পাশে যেন সবুজ আর সবুজ। পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে যাওয়ার পথে এমন অপরূপ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রাস্তায় অবশ্যই আপনি ছবি অথবা সেলফি তুলতে বাধ্য হবেন, কারণ জায়গাটি এতোটা সুন্দর, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।

Advertisement

১৪০০ একরের বিশাল রামগড় চা বাগান। বাগানের কেন্দ্রস্থলে আছে প্রকাণ্ড লেক। এই লেক শীতকালে পরিপূর্ণ থাকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে। দেশের অনেক পাখিপ্রেমী এ সময় ভিড় জমায় এখানে।

আপনার পাখিপ্রেমী হওয়ার ছুটে চলা হাজারো যাত্রীর দেহ মন প্রাণ জুড়িয়ে দেয় রামগড় প্রয়োজন নেই, যদি ন্যূনতম প্রকৃতিপ্রেমী হন তাহলে বিমোহিত হয়ে যাবেন এই সৌন্দর্যে। আর এ চা বাগানের মধ্য দিয়ে চলে গেছে বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়ক। এই পথে চা বাগান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সাধারণত ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত। গাছপালা, নদ-নদী, পাহাড়, সমুদ্র, লেক, ঝরনা আরো কত কী! সৃষ্টিকর্তা যেন প্রকৃতির পুরো রূপ ঢেলে সাজিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে। তার মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা অন্যতম।

Advertisement

২০০৪ সালে মাত্র আড়াই লাখ কেজি চা যেখানে উৎপাদন হতো, এখন প্রায় চারগুণ বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ কেজি। গুণগতমান ও উৎপাদনে বাগানটি স্থান করে নিয়েছে দেশের শীর্ষ বাগানের তালিকায়। জাতীয় গড় উৎপাদনের পরিমাণের চেয়ে প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয় এখানে। তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের গ্রিন টি ও হোয়াইট টি।

বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নতি সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশনসহ সার্বিক জীবনযাত্রার মান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এ বাগানটি এখন পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বাগানের আয়তন প্রায় ১৪০০ একর। চা প্লান্টেশন আছে প্রায় ৮০০ একরে।

আরও পড়ুন থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ৫ স্পট অন্যতম দর্শনীয় স্থান মহামায়া লেক 

মুখার্জি পরিবার থেকে ২০০৪ সালে বাগানের মালিকানা কিনে নেয় পেড্রোলো গ্রুপ। অব্যবস্থাপনায় বাগানটি অতিরুগ্ন হয়ে পড়ার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকসানের কবলে পড়ে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শ্রমিকদের মজুরি-রেশন বকেয়া পড়ে যায়।

মারাত্মক লোকসানের কবলে পড়ে বাগানটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ২০০৪ সালে পেড্রোলো গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেন মূখার্জি পরিবার। মৃতপ্রায় বাগানটি কিনে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ শুরু করে তারা। পুরাতন চা গাছগুলো তুলে রোপণ করা হয় উচ্চ ফলনশীল জাতের উন্নত চায়ের চারা। ধীরে ধীরে পুরো বাগানে ভূ-গর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে স্থাপন করা হয় সেচ ব্যবস্থা।

Advertisement

পরিকল্পনা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নিরলস পরিচর্যা ও যত্নে নষ্ট বাগানটিতে লাগে প্রাণের ছোঁয়া। নির্মাণ করা হয়েছে বিশালায়তনের অত্যাধুনিক অটোমেটিক মেশিনে চা তৈরির কারখানা। বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খানের চেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমই মৃতপ্রায় বাগানটিকে আজ দেশের সেরা বাগানের তালিকায় নিয়ে গেছে।

রামগড় সীমান্তে শহরে ঢুকতেই দেখা মিলবে ১৪০০ একরের বিশাল চা বাগান। এই চা বাগানে আসলে দেখা মিলবে আদিবাসীদের জীবন সংগ্রাম, বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, খাদ্যাভাস ইত্যাদি।

তরুণ উদ্যোক্তা ওমর শরীফ বলেন, এমনিতে পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আঁকা-বাঁকা বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কটি অনেক সুন্দর। সড়কের দু’পাশের সবুজ পাহাড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে সবাই মুগ্ধ হবেন। সড়ক দিয়ে যাওয়া-আসার পথে রামগড় চা বাগান তো এক কথায় অসাধারণ। বাগান দেখলে মনে হবে চায়ের রাজ্য সিলেট চলে আসছি হয়তো।

এমএমডি/জেএমএস/জিকেএস