বিপিএলের গত আসরে কাগজে-কলমের সঙ্গে মাঠের হিসেব মেলেনি। কাগজে-কলমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্সের পর তিন নম্বর দল ভাবা হয়েছিল ফরচুন বরিশালকে। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে মাঠে সেরা ক্রিকেট খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের বরিশাল।
Advertisement
এবারও কি তেমন কিছু ঘটতে পারে? ঘটবে না, এমনটা জোর দিয়ে বলতে চাইবেন না। কারণ, ক্রিকেটে কাগজে-কলমের সঙ্গে মাঠের হিসাব অনেক সময়ই মেলে না।
কাগজে-কলমের শক্তি যাই থাকুক, সাফল্যের পূর্ব শর্ত হলো- সেই সামর্থ্যের সঠিক ও সময়োপযোগী প্রয়োগ। এছাড়া প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ-পরিস্থিতি সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। কোন উইকেটে বা কোন পরিবেশে খেলা, এসব এসব বিষয় কোন দলের জন্য বেশি সহায়ক; তাও বিবেচনায় আনতে হবে।
উইকেটের কথা মাথায় রাখতেই হবে। ভুলে গেলে চলবে না, তিন ভেন্যুতে খেলা হলেও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। টুর্নামেন্টের আসল পর্ব মানে নকআউট রাউন্ডও এখানেই। এখন হোম অব ক্রিকেটের উইকেট শেষ পর্যন্ত কেমন থাকে? বরাবরের মতোই ধীরগতির, নাকি স্পোর্টিং কিংবা ব্যাটিংবান্ধব, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।
Advertisement
যে দলে স্ট্রোক-মেকার আর হাত খুলে খেলার পারফরমার বেশি, উইকেট ধীরগতির হলে সেই দলের ব্যাটিং ক্লিক করার সম্ভাবনা তত কম।
কাজেই শেরে বাংলায় সফল হতে হলে একাধিক ‘গ্রাফটার’ খুব প্রয়োজন। যারা ধরে ধরে খেলতে পারেন। সেই হিসেবে ফরচুন বরিশাল আছে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। তাদের তিন সিনিয়র প্লেয়ার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ ধরে খেলায় ওস্তাদ। তারা জানেন, শেরে বাংলার ধীরগতির পিচে অযথা তেড়ে-ফুড়ে মারার চেষ্টা হলো আত্মহত্যার সামিল। ঠান্ডা মাথায় সিঙ্গেলস, ডাবলসে খেলে আলগা বলের অপেক্ষায় থেকে তারা ইনিংস সাজাতে পারেন খুব ভালো। শেরে বাংলায় সফল হতে হলে এমন ধরে খেলার বিকল্প কিছু নেই।
শক্তি-সামর্থ্যের পাশাপাশি উইকেট ও কন্ডিশনকে বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। যে তিন ভেন্যুতে খেলা হবে, তার একেকটির উইকেটের ধরন একেক রকম।
ধরে নেওয়া হচ্ছে, শেরে বাংলার পিচ বরাবরের মতই ধীরগতির থাকবে। খানিক লো-বাউন্সও থাকতে পারে। সিলেট ও চট্টগ্রামের উইকেটে বল ব্যাটে আসে। উইকেট মোটামুটি ব্যাটিংবান্ধব থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বাউন্সও তুলনামূলক বেশি থাকায় শট খেলা যায় বেশি। বিগ হিট নেওয়াও হয় সহজ। তাই ওই দুই মাঠে হাত খুলে খেলার পারফরমার বেশি থাকলে বাড়তি সুবিধা মিলবে। সাফল্যের সম্ভাবনাও থাকবে বেশি।
Advertisement
এবারের বিপিএলে কুয়াশা আর শিশিরকেও বিবেচনায় আনা জরুরি। খেলা হবে জানুয়ারির পুরো সময়। বাংলাদেশে যখন তীব্র শীত। সন্ধ্যার পরপরই ঘন কুয়াশা ও শিশিরে ভিজে যায় চারপাশ। এমন পরিবেশটাও ম্যাচের ভাগ্য গড়তে বড় নিয়ামক হতে পারে।
যেকোনো ম্যাচে শিশির ফ্যাক্ট থাকতে পারে। বিশেষ করে লাক্কাতুরা চা বাগান ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রাত বাড়ার সাথে সাথে শিশিরও বাড়বে প্রচুর। সেখানে পরে বোলিং করা দলগুলোর স্পিনারদের কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে খুব কম। ভেজা বল স্পিনারদের ঠিকমতো গ্রিপ করা কঠিন। স্পিন নির্ভর বোলিং দিয়ে সিলেটে সন্ধ্যার ম্যাচের দ্বিতীয় সেশনে সফল হওয়া কঠিন হতে পারে।
একই সমস্যা হতে পারে চট্টগ্রামেও। শীত জেঁকে বসলে রাজধানী ঢাকাতেও ঘন কুয়াশা পড়বে। তখন সব ভেন্যুতেই দ্বিতীয় ম্যাচে টস ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। দেখা যাবে সন্ধা ঘনিয়ে আসতেই শিশিরে ভিজে একাকার আউটফিল্ড। ভেজা বল স্পিনারদের ধরতে অসুবিধা হবে। আর পেসারদের বল ‘স্কিড’ করবে। মানে ‘অব দ্যা পিচ’ জোরে চলে আসবে। সেটা পাওয়ার প্লে’তে ব্যাটারদের পক্ষে গেলেও শিশিরভেজা পিচ পরের দিকে ব্যাটারদের পাশাপাশি পেসারদেরও সহায়তা করবে। তাই স্পিনারদের সঙ্গে পেসারদের কার্যকাররিতাও সন্ধ্যার পরের খেলায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
মোদ্দা কথা, শিশির এবারের বিপিএলে যেকোনো দিন যেকোনো খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে। শিশির ভেজা পিচে স্পিনারদের সমস্যা হতে পারে, এমন চিন্তায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তই নিতে দেখা যাবে অধিনায়কদের।
এআরবি/এমএইচ/জেআইএম