দেশজুড়ে

নির্মাণকাজ শেষেও চালু হচ্ছে না নড়িয়ার আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ভেতরের চারদিকটা বেশ গোছালো। কয়েক মাস আগেই শেষ হয়েছে নির্মাণকাজ। নির্ধারণ করা হয়েছিল উদ্বোধনের দিনক্ষণও। তবে একটি পক্ষের আইনি বাধায় চালু করা সম্ভব হয়নি শরীয়তপুরের নড়িয়ার আধুনিক ও আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। নতুন হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় প্রায়ই উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে ছুটছেন সেবাপ্রার্থীরা। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে ব্যয়ও।

Advertisement

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখীপাড়া এলাকায় শুরু হয় ৫০ শয্যা নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ। চারতলার হাসপাতালটির মূল ভবনের পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসক, নার্সদের নতুন কোয়ার্টারসহ আরও পাঁচটি ভবন। নতুন হাসপাতালটিতে রোগীদের জন্য আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ সুবিধাসহ মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রয়েছে পাঁচটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। নির্মাণ শেষে উদ্বোধনের তারিখ ছিল গত ১০ সেপ্টেম্বরে। তবে মুলফৎগঞ্জ এলাকা থেকে পুরোনো হাসপাতালের কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ায় বিপক্ষে আপত্তি জানিয়ে আদালতের দারস্থ হয় স্থানীয় একটি পক্ষ। এতে আটকে যায় নতুন ভবন উদ্বোধনের কার্যক্রম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনটির অবস্থান নড়িয়া মূল উপজেলা থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা কেদারপুর ইউনিয়নের মুলফৎগঞ্জ এলাকায়। ২০১৮ সালে নদীভাঙনের শিকার হয়ে হাসপাতালটির তিনতলার মূল ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সচল রাখতে সরিয়ে নেওয়া হয় পাশের সরকারি কোয়ার্টারগুলোতে। এখন হাসপাতালের মূল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে একটি পরিত্যক্ত ভবনে।

জায়গা স্বল্পতার কারণে ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অর্ধেকে নেমে এসেছে। শয্যা রয়েছে মাত্র ২৫টি। এক্স-রে যন্ত্র থাকার পরও কক্ষের অভাবে সেটি বসানো সম্ভব হয়নি। প্যাথলজি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার সরকারি কোয়ার্টারে স্বল্প পরিসরে চালু রয়েছে। পুরোনো হাসপাতালে ভবন আর জায়গা সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারীরা।

Advertisement

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী আশ্রাফুন নাহার আশা বলেন, মূল ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর চিকিৎসক কোয়ার্টারে আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রেখেছি। তবে জায়গা সংকটের কারণে ফাইল কেবিনেট কম্পিউটার সঠিকভাবে বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে নতুন হাসপাতালে আমরা চলে গেলে আর সমস্যা হবে না।

হাসপাতালের আরেক কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালের সেবার মান খারাপ হচ্ছে। এজন্য কিন্তু চিকিৎসক কিংবা নার্সরা দায়ী নয়। এর প্রধান কারণ জায়গা স্বল্পতা। নদীভাঙনে মূল ভবন নদীতে চলে যাওয়ায় সামান্য একটু জায়গায় আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু রাখতে হচ্ছে। যদি অতিদ্রুত আমাদের নতুন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চালু করা যায়, তাহলে নড়িয়াবাসীকে আধুনিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।’

নতুন হাসপাতালটি চালু হলে মিলবে আধুনিক চিকিৎসাসেবা। ভোগান্তি লাঘবে আইনি জটিলতা কাটিয়ে শিগগির হাসপাতালটি চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা শাহলম মাদবর বলেন, ‘নতুন হাসপাতাল নির্মাণ হওয়ার পরও আমাদের কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ হয়নি। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য এই হাসপাতাল বানিয়েছে। তবে সেটি এখনো চালু করা হয়নি। হাসপাতালটি দ্রুত চালু করা হোক।’

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. কামরুল জমাদ্দার বলেন, হাসপাতালের কার্যক্রম যাতে সরানো না হয়,সেজন্য হাইকোর্টে একটি রিট চলমান। আমরাও চাই সব জটিলতা কাটিয়ে পুরোনো ভবন ছেড়ে উপজেলার মূলকেন্দ্রে নতুন ভবনে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু করতে। তাহলে আমাদের চিকিৎসকরা সঠিকভাবে সেবা দিতে পারবেন। পুরো উপজেলাবাসী এর সুফল ভোগ করবেন।

Advertisement

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জিকেএস