ধর্ম

ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব

সমাজ জীবনের প্রথম ভিত্তিই হলো পরিবার। পরিবার বলতে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একান্নভুক্ত পরিমণ্ডলকে বুঝায়। এদের সমন্বয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অত্যাধিক। মহান আল্লাহ তাআলার হিকমাত যে, তিনি আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও আদি মাতা হজরত হাওয়া আলাইহিস সালামের মাধ্যমে পৃথিবীতে পারিবারিক জীবনের সূচনা করেছিলেন। যা আজও বিদ্যমান।আজ ১৫ মে, রোববার, আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস।  এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- `পরিবার, পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য এবং তাদের টেকসই ভবিষ্যৎ`। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। তাই ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ।পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতে সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে পরিবারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টিই হলো ‘পরিবার দিবস’ পালনের মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা পারিবারিক বন্ধকে মজবুত করার লক্ষ্যেই পরিবারের প্রথম বিন্যাস বৈবাহিক চুক্তির পদ্ধতি চালু করেছেন। যা হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের মাধ্যমে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করেছে।পারিবারিক পদ্ধতির ব্যাপারে নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি যথার্থই বলেছেন ‘পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র।’ কারণ  এ বিয়ের মধ্যেই নিহিত আছে মানব জীবনের পবিত্রতা ও সুস্থতা। ব্যক্তি ও  পারিবারিক পবিত্রতা ও সুস্থতার উপরই নির্ভর করে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময় মানব জাতির পবিত্রতা ও সুস্থতা।মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি পৃথিবীতে মানব বংশ সম্প্রসারণেও এ পারিবারিক পদ্ধতির বিধান চালু করেছেন। পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১)অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে। তারপর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পার।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)পারিবারিক জীবনের সুফলউপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, পারিবারিক বন্ধন থেকেই মানব বংশ সম্প্রসারণ হয়েছে। যদি সকল জাতি ও গোত্রের লোকেরা বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তবে সে পরিবার সমাজে সর্বোত্তম আদর্শ পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যেখানে বইতে থাকে শান্তির ফল্গুধারা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বিচরণ হবে সুখকর ও আনন্দময়।পরিবারের সদস্যরা যখন আল্লাহর দেয়া দায়িত্বানুভূতি সম্পর্কে সজাগ থাকবে। স্ত্রী তার অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে লাভ করবে। স্বামী যখন স্ত্রীর নিকট তার অধিকার পাবে, সন্তান বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য ও তাদের অধিকার লাভ করবে, আত্মীয়-স্বজন যখন পরস্পরের যথাযথ সম্মান মর্যাদা পাবে, তখন কোনো স্ত্রী আর তার অধিকারের দাবিতে প্রকাশ্য জনপথে আন্দোলনে বের হবে না, কোনো স্বামী ভালোবাসা ও সুন্দর জীবন-যাপনে অন্য নারীর প্রতি আশক্ত হবে না, কোনো সন্তানই বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করবে না এবং আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কের দৃঢ়তায় আল্লাহর রহমত, বরকত ও অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকবে।শুধু তাই নয়-ইসলাম নির্দেশিত পারিবারিক জীবন হলো আল্লাহ তাআলার মহা অনুগ্রহ। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত পারিবারিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হলে সমাজ থেকে মহামারীর আকার ধারণকারী পরকীয়া, লিভটুগেদার, মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণপরবর্তী হত্যা, অবৈধ ভালোবাসায় ব্যর্থদের আত্মহত্যাসহ সকল প্রকার অপরাধ প্রবণতা এবং জীবনের শেষ সময়ে বৃদ্ধাশ্রমের মতো দুঃখী জীবন-যাপন চিরতরে নির্মূল হবে।তাই একটি সুন্দর ও আদর্শ পরিবার গঠনের লক্ষ্যে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনাসমূহ মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের অপরিহার্য দাবি।পরিশেষে...আদর্শ ও উত্তম পরিবার গঠনে পরিবারের দায়িত্বশীলের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বনবির ছোট্ট একটি হাদিসের মাধ্যমে তা তুলে ধরতে চাই। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দিনার ক্রীতদাস মুক্তিতে ব্যয় করেছ, একটি দিনার মিসকিনকে দান করেছ এবং একটি দিনার পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করেছ। এ খরচ করা দিনারগুলোর মধ্যে নিজ পরিবারের লোকদের জন্য খরচ করা দিনারের মূল্য- প্রতিদান লাভের দিক থেকে সর্বোত্তম।’ (মুসলিম)সুতরাং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধান অনুযায়ী পরিবার গঠন করলে সে পরিবার হবে একটি আদর্শ ও সর্বোত্তম পরিবার। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর পরিবার গঠনের লক্ষ্যে সমাজের সর্বস্তরে কুরআন-হাদিসের সুমহান আদর্শকে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এবিএস

Advertisement