ভ্রমণ

ঈদে ঘুরে আসুন `সাগরকন্যা` কুয়াকাটায়

নীল জলের ঢেউ সাদা ফেনা তুলে ভেঙে পড়ছে সৈকতে। সৈকতের বালুকায় দাঁড়িয়ে চোখে পড়বে দিগন্তজোড়া আকাশ আর সমুদ্রের রাশি রাশি নীল জলে। পাখিদের আনাগোনা, ট্রলার ও নৌকায় গভীর সমুদ্রে ছুটে যাচ্ছে জেলেরা। মন ভোলানো এরকম দৃশ্য দেখতে ঈদের এই ছুটিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অথবা প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন `সাগরকন্যা` কুয়াকাটায়। সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা এখন শুধু সৈকতই নয়, ঘুরে দেখার আরও অনেক জায়গা রয়েছে। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পুব দিকে গড়ে তোলা হয়েছে পরিকল্পিত ইকো পার্ক। নারকেল, ঝাউ, আমলকী, বকুল, অর্জুন, জারুল, হিজল, চালতা, পেয়ারা, জাম, হরীতকী, নিম, করমচা, মহুয়া, কামিনী, শেফালি ইত্যাদি গাছে ভরা এ পার্কটি। মেঠোপথ চলে গেছে বাগানের মধ্য দিয়ে। তৈরি করা হয়েছে পিকনিক শেড ও টয়লেট। বিশুদ্ধ পানির জন্য বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। বাগানটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে লেক। দুই ধারে হাঁটাপথ আর মধ্য দিয়ে বেইলি সেতু থাকায় ঘুরে বেড়ানোর এক চমৎকার জায়গা বলা যায় একে।সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা থেকে একটু পশ্চিম দিকে রয়েছে সাগরমোহনার কাছে অবস্থিত বনাঞ্চল `ফাতরার চর`। অবশ্য কাগজপত্রে এর নাম `টেংরাগিরি`। এটি ম্যানগ্রোভ জাতের একটি বন। শীত মৌসুমে অতিথি পাখির সমাগমে মুখর থাকে এ বন। আর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে ১০ কিলোমিটার পুব দিকে রয়েছে নির্জন `গঙ্গামতির চর`। এখানে যাওয়াটাই যেন একটা রোমাঞ্চকর অভিযান। একটু কষ্ট করে এখানে গেলে নির্জন প্রকৃতির মধ্যে মন ভালো হয়ে যাবে। নীল জলাধার আর সাদা বালুর বেলাভূমি রয়েছে এখানে। সবুজের ছায়া দিচ্ছে কেওড়া, গেওয়া, ছইলা, বাইনসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ।কুয়াকাটার একেবারে কোলঘেঁষে ষাটের দশকে ২০০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় নারকেলবাগান, যা ফার্মস অ্যান্ড ফার্মস লিমিটেড নামে পরিচিত। এ বাগানে নারকেল গাছ ছাড়াও পেয়ারা ও কাজুবাদাম গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে পিকনিক করার জন্য এটা চমৎকার জায়গা। রাতের বেলায় নারকেলপাতার ফাঁক দিয়ে চুইয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোয় বসে যেন অন্য এক পৃথিবীতে চলে যাবেন।কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে গড়ে উঠেছে শুঁটকিপল্লী। কুয়াকাটার জেলেরা বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা মাছ শুঁটকি করে থাকেন। লইট্টা, ছুরি, ফালিসা, কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া এমনকি ভোল মাছও শুঁটকি করা হয়। শুঁটকি মাছের এ প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখতেও বেশ মজা। চাইলে কিনেও আনতে পারেন নানা রকম মজাদার শুঁটকি। তবে শুঁটকিপল্লীর গন্ধটা নাকে সয়ে নিতে হবে।কীভাবে যাবেন-ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। ঢাকা-কলাপাড়া বাস সার্ভিসও চালু আছে। এ ছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে বরিশাল আসতে পারেন। এরপর বরিশাল থেকে বাসে সরাসরি কুয়াকাটা। বরিশালের লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন বাস ছাড়ে, এক ঘণ্টা পর পর। এ ছাড়া বরিশালের লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকালে বিআরটিসির পর্যটক স্পেশাল নামে একটি বাস কুয়াকাটায় আসে। আবার ঢাকা থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত লঞ্চে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী লঞ্চে আসার পর পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে কুয়াকাটা। জলপথে পাবেন নানা বিলাসবহুল লঞ্চ। কেউ ইচ্ছা করলে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও কুয়াকাটা চলে আসতে পারবেন।সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় এখন আর থাকা-খাওয়ার কোনো অসুবিধা নেই। এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে সব রকম খরচের মধ্যেই অসংখ্য আবাসিক হোটেল-মোটেল।

Advertisement