একুশে বইমেলা

জিওগ্রাফিকা: জ্ঞানের দিগন্তে সহযাত্রী

মাহমুদ নোমান

Advertisement

ভাবছি হাঁটা শুরু করবো এখন থেকে। বেশ সময় খরচ করে ফেললাম! আবার ভাবছি, সেই কবে থেকে হাঁটছি। সেই চেনা-অচেনা গলিপথ ধরে। অজানাকে জানার জন্য হাঁটা, অধরাকে ধরার আকুতি। লোকে বলে ‘অভিযাত্রী’। হ্যাঁ, সেই অভিযাত্রার আকুলতা উদযাপন চমৎকার পৃষ্ঠাজুড়ে মুদ্রিত করে সেঁটে দেওয়ার কাজটি করে যাচ্ছেন বলে মনে হয়েছে নতুন একটি জার্নাল পাঠের মাধ্যমে। বৈপ্লবিক চেতনের অভিযাত্রী জ্যোতির্ময় ধরের সম্পাদন নির্বাহে অনিন্দ্য সুন্দর প্রকাশনায় ‘জিওগ্রাফিকা’।

জ্ঞানের দিগন্তে আপনার সহযাত্রী ‘জিওগ্রাফিকা’। পরিবেশ-প্রকৃতি, পর্বতারোহণের দৃশ্য কাব্যের মিতালি ঘটন। সোজা কথায় বিশ্বকে জানার ও জানানোর জার্নাল হয়ে ওঠার তেজোময় পথচলা। এসব কথা বলার কারণ হলো, জিওগ্রাফিকা জার্নালের দ্বিতীয় সংখ্যাটি হাতে পেয়ে আমি রীতিমত আশ্চর্য। জিওগ্রাফিকা জার্নালের জাদুকরী উপস্থাপনে নিজের অভিযাত্রী মন মুহূর্ত টেনে টেনে নিয়ে গেছে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে। এখানেই জিওগ্রাফিকার সফলতা বলতে পারি।

জিওগ্রাফিকার দ্বিতীয় সংখ্যাটি বিভিন্ন আঙ্গিকে পর্যালোচনায় বেশ সমৃদ্ধ। শুধু যে ভ্রমণসাহিত্য নিয়ে উৎসুক দৃষ্টি এটাতে আকর্ষিত হবে সেটি নয়। একজন সাহিত্যমনা পাঠকের কাছেও জিওগ্রাফিকা সংগ্রহযোগ্য জার্নাল মনে করি। এর সুসম্পাদনা বিষয়ের সাথে নতুন কিছু জানানোর বেশকিছু উপাদান আছে। এর প্রতি পৃষ্ঠা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

Advertisement

সংখ্যাটি ছিল চট্টগ্রামের অভিযাত্রী এভারেস্ট ও লোৎসে বিজয়ী বাবর আলীকে প্রচ্ছদগল্পে সাক্ষ্য দিয়ে। এ সংখ্যায় বাবর আলীর তিনটি লেখা বেশ চমক জাগানিয়া। বাবর আলীর ভাষা বেশ অল্পতে টানতে পারে পাঠককে। এমনকি যুৎসই শব্দের ব্যবহার আলাদা করেছে বাবর আলীকে। শিরোনামগুলো হলো- ‘এভারেস্ট ও লোৎসে বিজয়ের দিনলিপি’, ‘মাউন্ট আমা দাবলাম- মায়ের গলার হার অভিযান’, ‘সাইকেলের সওয়ারি- কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী’। বাবর আলী নিজের অভিযাত্রিক জ্ঞান দিয়ে বেশ আকর্ষণীয় সংখ্যা করে তুলেছে।

আরও পড়ুন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কবিতা নিয়ে ‘বৃত্তান্ত’ পাবনার কবি ও কবিতা: বাংলা সাহিত্যের অমূল্য দলিল

এরপর এলিজা বিনতে এলাহীর ‘কেনিয়ার প্রত্নস্থল পরিভ্রমণ’ কিংবা তারেক অণুর লেখা ‘ভিনগ্রহের দ্বীপ স্পিটসবের্গেন’ জমিয়ে দিয়েছে সংখ্যাটিকে। এ পর্যন্ত চমকে সংখ্যাটি শেষ করেননি। আব্দুল মোমিন ও রাজেশ চক্রবর্তীর ছবির গল্পে খানিক দম ফেলা যেন দৃশ্যের মোহন জালে; এরপরে দীপেন ভট্টাচার্যের বিজ্ঞানের কথা- পূর্ণগ্রহের বিস্ময়’ লেখাটি আরেক চুমুক বৈপ্লবিক সৌন্দর্য সাধন, এরমধ্যে দ্বৈপায়ন পাল লিখেছেন ‘চট্টগ্রামের খ্রিষ্টান সমাধি’ শিরোনামে তাৎপর্যপূর্ণ লেখাটি।

এসবে শেষ তবু করলো না, দেবাশীষ বল দিলেন আরেক টিউন বাজিয়ে- ‘ম্যালরি-ই কি প্রথম এভারেস্ট আরেহণকারী? দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রহস্যের বিলম্বিত সমাধান’ শীর্ষক লেখাটি! এতসব এক সংখ্যায় পেয়ে পাঠক হিসেবে আমার তো বেশ খুশিতে উড়াধুরা নাচন অবস্থা। আর সমৃদ্ধ হওয়ার আকুলিত পরান, তখনই নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতির্ময় ধর আর সালেহীন আরশাদী লিখলেন সম্পাদকীয় অবস্থানপত্র যেন- ‘বাংলাদেশে পর্বত আরোহণের ভবিষ্যৎ কী?’

অনেকদিন পরে একটা জার্নালে নিজেকে সঁপে দিয়ে এতই যে সম্মৃদ্ধ হয়েছি, পাঠকদের কাছে ‘জিওগ্রাফিকা’র কথা না- বললেই অপরাধবোধ হতো। এ জন্যই বলছি, তাড়া নিয়ে সংগ্রহ করুন জিওগ্রাফিকা। আপনার মুঠো ভরে যাবে অকৃত্রিম ঐশ্বর্যে।

Advertisement

জিওগ্রাফিকানির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক: জ্যোতির্ময় ধরপ্রকাশস্থান: চট্টগ্রাম বিনিময়: ৩৫০ টাকা।

এসইউ/এএসএম