আইন-আদালত

যে প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগ চান সুপ্রিম কোর্ট

গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দরখাস্ত আহ্বান ও একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এ জন্য একটি প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়া এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে।

Advertisement

বর্তমানে সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারক নিয়োগ দেবেন। (২) কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে, এবং (ক) সুপ্রিম কোর্টে অন্যূন দশ বছর আইনজীবী না হলে, অথবা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে তিনি বিচারক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

৯৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক-সংখ্যা সাময়িকভাবে বাড়ানো উচিত বলে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে তিনি যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করতে পারবেন। কিংবা তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করলে হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারককে যে কোনো অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপিল বিভাগের আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের অধীন বিচারক নিযুক্ত হতে কিংবা বর্তমান অনুচ্ছেদের অধীন আরও এক মেয়াদের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হতে বর্তমান অনুচ্ছেদের কোনো কিছু নিবৃত্ত করবে না।

কিন্তু এমন পদ্ধতিতে বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন।

Advertisement

গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর তিনি বিচার বিভাগের সংস্কারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তার মধ্যে এটি অন্যতম।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপের ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন

যাত্রাবাড়ীতে শত শত খুনে অসংখ্য পুলিশ থাকলেও ধরবো কমান্ডারদের নানা সংকটে নিমজ্জিত ব্যাংকখাত

প্রস্তাবনায় প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। ওই খসড়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতামতও নেওয়া হয়। বিচারপতিরা উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত মোট ১৫টি মতামত দেন। ওই মতামত দেওয়ার পর সুপারিশটি গত ২৮ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

Advertisement

উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার জন্য একটি জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে স্বাধীন, নিরপেক্ষ কমিশন বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ওই কাউন্সিলের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১০ জন। প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন।

সদস্য হিসেবে যাদের প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন, আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, অধস্তন আদালতের বিচারক থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এমন বিচারকদের মধ্য থেকে কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আইনের অধ্যাপক এবং দুইজন নাগরিক প্রতিনিধি।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে উপযুক্ত প্রার্থীকে সুপারিশ প্রদানসহ কাউন্সিলের যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারক নিয়োগে সুপারিশ করার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুরোধ জানানো হলে কাউন্সিল সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।

এছাড়া, কাউন্সিল প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত বা পরামর্শ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তিকে কাউন্সিলের সভায় আহ্বান করতে পারবে। অথবা যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সিল কর্তৃক চাহিদাকৃত তথ্য উপস্থাপনের নির্দেশ দিতে পারবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

এফএইচ/কেএসআর/এমএস