ধর্ম

জুমার খুতবায় যা বলতেন বিশ্বনবি (সা.)

খুতবার শাব্দিক অর্থ বক্তৃতা বা বক্তব্য দেওয়া। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় খুতবা এমন বক্তৃতা, যাতে আল্লাহর প্রশংসা, তার একত্ববাদের ঘোষণা, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দরুদ এবং উপস্থিত সাধারণের প্রতি উপদেশ বিদ্যমান থাকে।

Advertisement

খুতবা জুমার নামাজের অপরিহার্য অংশ। খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ হয় না। যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা জুমার খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। খুতবার সময় মুসল্লিদের চুপ থাকা ওয়াজিব। এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা এমনকি জিকির থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ রয়েছে।

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর কুবার মসজিদে প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। এ নামাজে তিনি নিজেই ইমামতি করেন। এ দিন জুমার নামাজের আগে তিনি দুটি খুতবা প্রদান করেন। তখন থেকেই শুক্রবারে জুমার নামাজের জামাতের আগে দুটি খুতবা প্রদানের নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। ওফাতের আগ পর্যন্ত নবিজি (সা.) এবং তার পর খলিফা ও অন্যান্য সাহাবিরাও জুমার আগে দুটি খুতবা দিতেন।

জুমার খুতবার শুরুতে নবীজি (সা.) আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনার মাধ্যমে খুতবা শুরু করাকে ফকিহ আলেমরা মুস্তাহাব বলেছেন। আল্লাহর প্রশংসার পর কখনো কখনো নবিজি (সা.) বলতেন, নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী আল্লাহর গ্রন্থ। সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়াত মুহাম্মাদের (সা.) হেদায়াত। সর্বনিকৃষ্ট কাজ হলো নবউদ্ভাবিত কাজ। প্রত্যেক নবউদ্ভাবিত কাজই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (তামামুল মিন্নাহ)

Advertisement

জুমার খুতবায় নবিজি (সা.) কোরআনের কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতেন। উম্মে হিশাম বিনতে হারিসা বলেন, আমি নবিজির মুখে শুনে শুনে কোরআন শিখেছি। তিনি প্রত্যেক জুমায় মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে কোরআন পড়তেন। (জাদুল মাআদ)

নবিজির (সা.) জুমার খুতবায় ইসলামের বিধি-বিধান, কেয়ামত, আল্লাহভীতি, আল্লাহর প্রিয় ও অপ্রিয় কাজ, দুনিয়ার মোহের পরিণতি, আখেরাতের শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা থাকত।

জুমার খুতবায় নবিজি (সা.) সব মুসলমানদের কল্যাণের জন্য দোয়া করতেন। মুসলমানদের কোনো সংকট দেখা দিলে সেজন্যও বিশেষভাবে দোয়া করতেন। আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সা.) একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এ অবস্থায় তিনি জুমার দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। এক গ্রাম্য ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গবাদি পশুগুলো অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে, পরিবারবর্গ ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দুই হাত ওঠালেন এবং দোয়া করলেন। (সুনানে নাসাঈ)

খুতবার শেষে নবিজি (সা.) সাধারণত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ইমাম শাবি (রহ.) বলেন, নবিজি (সা.) খুতবা শেষ করতেন তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা দিয়ে। বেশিরভাগ খুতবায় তিনি কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতেন। (জাদুল মাআদ)

Advertisement

নবিজি (সা.) সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্ত খুতবা দিতেন। খুতবাকে অনেক বেশি দীর্ঘায়িত করতেন না তিনি। সাহাবিদেরও তিনি সংক্ষিপ্ত খুতবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আম্মার ইবন ইয়াসির (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সংক্ষিপ্ত খুতবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অল্প কথায় সুন্দর ও অর্থপূর্ণ খুতবা দিতেন। খুতবায় তিনি অতিরিক্ত কথা বলা এবং অহেতুক জটিলতা তৈরি করা অপছন্দ করতেন। (আল-ইসতিযকার)

জাবির বিন সামুরা (রা.) বলেন, আমি নবিজির (সা.) সঙ্গে নামাজ আদায় করতাম। তার নামাজ ছিল পরিমিত, তার খুতবাও ছিল পরিমিত। (সুনানে নাসাঈ)

ওএফএফ/জিকেএস