‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভালো আলোচনার মাধ্যমে নতুন ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হবে। আমরা আশা করছি বছরের প্রথমাংশে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করবে। ২০২৫ সালে আমরা আশার আলো দেখছি।’
Advertisement
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এক সাক্ষাৎকারে জাগো নিউজকে আগামী বছরের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কথা বলার সময় এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে ড. ইউনূসের একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং তার প্রজ্ঞা আছে। সেটা কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সুবিধা আদায় করার ক্ষেত্রে নতুন ধরনের উদ্যোগ নেবেন। সেই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আমাদের রপ্তানি বৈশ্বিক বাজারে বাড়বে এবং বিভিন্ন নতুন ব্লকে ব্যবসা বাড়াতে সক্ষম হবো।
আগামী বছর কেমন যাবে?গত বছর বড় ধরনের রক্তপাতের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনীতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে ছাত্রদের আন্দোলনে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দর্শন নিয়ে ছাত্রদের যে দাবি তা সামনে রেখে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন একটি স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। তাই আমরা আশা করবো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে পিছিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেবে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য ২০২৫ সালে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
Advertisement
আমাদের দাবি থাকবে আগামী বছর সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ দমন ও ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যদি না করতে পারে তাহলে ব্যবসা ধরে রাখা রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হবে।
জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার আমেরিকার মসনদে বসবেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নতুন তিনি চায়নার পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করার কথা বলেছেন সেটা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করবে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
একই সঙ্গে ব্যাংকখাতের যে দৈন্যদশা তা সংস্কারের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাও সময়োপযোগী করতে হবে। এগুলো যদি আমরা করতে পারি তাহলে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি আমরা একটি ভালো ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ এবং রপ্তানির ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করছি।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ছাড়াও আগামী বছর দেশীয় কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে?ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরপরই দেশে একটি বিশেষ মহল শ্রমিকদের উসকে দিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল, যা তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা সম্পূর্ণরূপে আমাদের রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। আমি মনে করছি আগামী বছরও শ্রম অসন্তোষ ও জ্বালানি নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য।
Advertisement
আমরা শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছি কিন্তু তারপরও অসন্তোষ কমেনি। তার মানে এর পেছনে অন্য কিছু রয়েছে, শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য অসন্তোষ তৈরি করা এবং এর মাধ্যমে এই সেক্টরটা ধ্বংস করা। আমাদের দাবি থাকবে আগামী বছর সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ দমন ও ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যদি না করতে পারে তাহলে ব্যবসা ধরে রাখা রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক ক্রেতাদের আপনারা কী বার্তা দিতে চান?তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতারা আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদার। আমরা সবাই মিলে এ ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখতে চাই উভয়ের স্বার্থে। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে এ খাতা কিছুটা অস্থিতিশীল করা হয়েছিল। ফলে সেক্টর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক অবস্থা ও অন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।
২০২৪ সাল নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেছে। ২০২৫ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সুযোগ চাই। নতুন ঋণ নয়, বরং যে ঋণ নেওয়া আছে তার সঠিক ব্যবহারের জন্য সুযোগ প্রয়োজন। সে সুযোগটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার এই মুহূর্তে।
বৈশ্বিক ক্রেতাদের নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা তাদের দেওয়া কার্যাদেশ যথাসময়ে দিতে সক্ষম হবো। এক্ষেত্রে তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন আরও বেশি কার্যাদেশ দিয়ে, যাতে আমাদের শ্রমিকদের এবং সেক্টরের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় কার্যাদেশের অভাবে। একসঙ্গে কাজ করলে শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবো।
সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?২০২৪ সাল নানান ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেছে। ২০২৫ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সুযোগ চাই। নতুন ঋণ নয়, বরং যে ঋণ নেওয়া আছে তার সঠিক ব্যবহারের জন্য সুযোগ প্রয়োজন। সে সুযোগটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার এই মুহূর্তে।
অন্যদিকে ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্বল অবস্থার কারণে আমরা সমস্যায় পড়ছি, কারণ ব্যাংকগুলো এলসি টাইমলি খুলতে পারছে না, ভালো ব্যবসায়ীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে টাকা পাচ্ছি না। ফলে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের পাওনা টাকা দ্রুত সময়ে দিতে হবে, যাতে শ্রমিকদের বেতন ও অন্য খরচ মেটাতে পারে।
আইএইচও/এএসএ/এএসএম