রাসেল রায়হান
Advertisement
২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। আমার প্রথম কবিতার বই বেরিয়েছে সম্ভবত। ওই দিন এক ভদ্রলোক ফেসবুকে নক দিলেন, মেলায় যাব কি না জানতে চেয়ে। আমি উত্তর দিলাম। আমার ফোন নম্বর চাইলেন তিনি, সেই মেসেজেই নিজের নম্বর দিয়ে রাখলেন।
ভদ্রলোকের নাম ইফতেখার মাহমুদ—কথাশিল্পী, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। সেদিনই, নাকি তার দুয়েক দিন বাদে দেখা হয়েছিল, ঠিক মনে করতে পারছি না। কিন্তু প্রথম দেখা হওয়ার পর সেই সম্পর্ক ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে। প্রথমে পরিচিত মানুষ, সেখান থেকে বন্ধু, তারপর প্রায় পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয় আমাদের।
বইপত্র, লেখালেখি, সিনেমা ইত্যাদিসহ সমসাময়িক সরল–জটিল নানা বিষয়–আশয় নিয়েই আমাদের আলাপ হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর বাইরে প্রায় প্রতি শুক্রবার দেখা হওয়া রুটিন হয়ে গেছিল। ভালো কিছু পড়লেই ইফতেখার ভাই ফোন করেন, সেটা নিয়ে আলাপ করেন, পড়তে বলেন। নিজে কিছু লিখলে আমাকে পড়তে দেন, পরামর্শ চান। আমি নিজেও লেখা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো জটিলতায় পড়লে পরামর্শের জন্য সবার আগে তাঁকে নক দিই। হয়তো আরও অনেকের সঙ্গে ইফতেখার ভাইয়ের এমন সম্পর্ক ছিল বা আছে। তাঁর বিশেষত্ব হলো, তিনি প্রতিটি মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। ভালোবাসেন, সেটা মন থেকেই। প্রতিটি সম্পর্ককে তিনি এতটা গুরুত্ব দেন যে আমার ধারণা, প্রত্যেকে ভাববে যে সে ইফতেখার ভাইয়ের সবচেয়ে কাছের মানুষ। ভণিতা–ফনিতা তাঁর ভেতরে নাই। ছিল না কখনো। তাঁর মতো এত চমৎকার আমি খুব কম মানুষকে বলতে শুনেছি। ভালো লেখেন। এবং লেখকদের চিরায়ত ঈর্ষা তাঁর ভেতরে সামান্যও নেই।
Advertisement
‘আরও গভীরে’ নামের একটি উপন্যাস আমি ইফতেখার ভাইকে উৎসর্গ করেছিলাম। তাঁর ধারণা ছিল, আমি এটা খুব অযত্নে লিখেছি। আমার এর আগের দুটো উপন্যাস বা কবিতার বই নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে নিজের মুগ্ধতার কথা বলে বেড়িয়েছেন। আবার ‘আরও গভীরে’কে খারাপ বলতেও খুব রাখঢাক করেননি।
সম্ভবত করোনা মহামারি শুরু হলে আমাদের মধ্যকার রুটিনে ভাটা পড়া শুরু করে। গত এক-দেড় বছরে সেই ভাটার পানি আর খুব বেশি বাড়েনি। হতে পারে, আমার দিক থেকেই ঘাটতি ছিল। কিন্তু ইফতেখার ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসায় ঘাটতি পড়েনি কোনো দিন। একবিন্দুও না। ফলে ইফতেখার ভাইয়ের ব্রেইন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবরে আমি নিজের আত্মীয় আক্রান্ত হওয়ার আঘাত পেলাম! ফোর্থ স্টেইজে আছে।
আরও পড়ুন
বইমেলা নিয়ে হঠাৎ সরব কেন লেখক-প্রকাশকরা কবি রহমান হেনরী চাকরিতে পুনর্বহাল, আনন্দিত লেখকরাসেপ্টেম্বরের একদম শেষেও ইফতেখার ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিই ফোন দিয়েছিলেন। আমার খোঁজখবর নিলেন। পরিবারের অন্যদেরও খোঁজ নিলেন। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও জানালেন না নিজের অসুস্থতার কথা। সেই অভিমান আমার থেকে যাবে। কিন্তু এ-ও জানি, ইফতেখার ভাইয়ের যে ব্যক্তিত্ব, সে জায়গা থেকে তিনি কোনো দিন কারও করুণার পাত্র হতে চাইবেন না।
Advertisement
গত মাসে এখানে একটা সার্জারি হয়েছিল ইফতেখার ভাইয়ের। কিন্তু তেমন কোনো উন্নতি হয়নি অবস্থার। এখন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নিয়ে যেতে বলছেন চিকিৎসকেরা। সে জন্য ৭০ লাখ টাকা প্রয়োজন। একজন শিক্ষকের আর কত টাকা সঞ্চয় থাকে, যেখানে এর আগেও জটিল অপারেশন করাতে হয়েছে। তবু তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা চেষ্টা করছে।
৭০ লাখ! জানি না কতটা সম্ভব হবে। তবু আমরাও চেষ্টা করতে চাই। তাঁর চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে। সেখানে তাঁর স্ত্রী, আমাদের তানিয়া ভাবির ব্যাংক ডিটেইল ও বিকাশ নম্বর দেওয়া আছে। আপনারা চাইলে ইফতেখার ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে পারেন। যে যেভাবে পারেন, যতটুকু পারেন—দিয়ে ইফতেখার ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
যেভাবে পাঠাবেন-ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম: TANIA NASREEN KHANAMব্যাংকের নাম: DHAKA BANK PLCশাখার নাম: DHANMONDI MODEL BRANCHহিসাব নম্বর: 2062000081363বিকাশ: Tania- 01718280860।
ওপরের বিকাশ নম্বরের লিমিট ক্রস করেছে। সে ক্ষেত্রে বিকাশ থেকে ব্যাংকে পাঠানোর অনুরোধ করছি। নিজের নিজের জায়গা থেকে ইফতেখার ভাইয়ের কথা ছড়িয়ে দিতে পারেন।
লেখক: কবি ও কথাশিল্পী।
এসইউ/এমএস