২০২৪ সালে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ইস্যু। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোটো নৌকায় আসা অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বছরের জুলাইয়ে বিশাল বিজয় নিয়ে দেশটিতে ক্ষমতায় বসে লেবার পার্টি। ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। বাতিল করেছেন আগের সরকারের বহুল আলোচিত রুয়ান্ডা পরিকল্পনাসহ নানা উদ্যোগ।
Advertisement
একনজরে দেখে নেওয়া ২০২৪ সালে অভিবাসন ইস্যুতে যুক্তরাজ্যে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা-
ইংলিশ চ্যানেল পাড়িচলতি বছর ফ্রান্সের উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন ৩০ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস জানিয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৬৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী।
তবে চলতি বছরের এই সংখ্যা ২০২২ সালের মোট সংখ্যার তুলনায় বেশি হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ওই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে মোট ৪৫ হাজার ৭৭৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিলেন।
Advertisement
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে জয় পেয়েই বহুল সমালোচিত রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল করে লেবার পার্টি সরকার। এই পরিকল্পনার অধীনে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আসা অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যে না রেখে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে চেয়েছিলেন আগের কনজারভেটিভ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
আরও পড়ুন>>
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করলো ইউরোপের কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যে ছেলেদের নামের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ‘মুহাম্মদ’ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ৬ জুলাই কিয়ার স্টারমার রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিলের ঘোষণা দেন। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ছোট নৌকায় আশ্রয়প্রার্থীদের আসা বন্ধ করতে চেয়েছিল সুনাক সরকার। তবে আইনি জটিলতায় কাউকে রুয়ান্ডায় পাঠানো সম্ভব হয়নি।
অর্থ ফেরত দেবে না রুয়ান্ডারুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশটিকে দেওয়া অর্থ যুক্তরাজ্যকে আর ফেরত দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় রুয়ান্ডান সরকার। লেবার পার্টি ক্ষমতায় এসে পরিকল্পনাটি বাদ দেওয়ার পরই রুয়ান্ডা এই ঘোষণা দেয়।
Advertisement
আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যের বাইরে অর্থাৎ রুয়ান্ডায় রাখার লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণসহ সামগ্রিক চুক্তির অংশ হিসেবে দেশটিকে প্রাথমিকভাবে ২৪ কোটি পাউন্ড দিয়েছিল লন্ডন। ৯ জুলাই রুয়ান্ডার সরকারের উপ-মুখপাত্র অ্যালাইন মুকুরালিন্ডা দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, আমরা যে চুক্তিতে সই করেছি তাতে অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্ত ছিল না।
নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগরুয়ান্ডা প্রকল্পে বরাদ্দ করা ১০ কোটি ডলার অর্থ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি কেনা এবং মানবপাচারকারী চক্রকে ভেঙে দেওয়ার কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, রুয়ান্ডা প্রকল্প থেকে ১০০ কোটি ডলার অর্থ গোপন নজরদারির জন্য প্রযুক্তি পণ্য কেনায় বিনিয়োগ করা হবে। মানবপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে এসব প্রযুক্তি দিয়ে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৭৫ বছরে সর্বোচ্চরেকর্ড হারে অভিবাসনের ফলে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ২০২৩ সালে ছয় লাখেরও বেশি বেড়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, গত ৭৫ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার কখনো এত বেশি হয়নি। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের জনসংখ্যায় নতুন ৬ লাখ ১০ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছেন। এতে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৯ লাখে।
তবে এই জনসংখ্যায় ‘প্রাকৃতিকভাবে’, অর্থাৎ জন্ম ও মৃত্যুর ব্যবধানের কারণে যুক্ত হয়েছেন মাত্র ৪০০ জন। অথচ ১২ মাসে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ২২ হাজার। তার আগের বছর অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছিল সাড়ে পাঁচ লাখের মতো।
বিতর্কিত আশ্রয়কেন্দ্র বাতিলবিতর্কের মুখে ‘বিবি স্টকহোম’ নামের বার্জে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এই ভাসমান আশ্রয়কেন্দ্রে অভিবাসীদের সঙ্গে ‘পশুর মতো’ আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর লেবার পার্টি জানিয়েছে, বিবি স্টকহোমের সঙ্গে আগামী বছর চুক্তি বাতিল হচ্ছে। এতে সরকারের দুই কোটি পাউন্ড বেঁচে যাবে।
মানবপাচারকারীদের সন্ত্রাসী বিবেচনাইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অবৈধ পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে আসা ছোটো নৌকা থামাতে মানবপাচারকারী চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থার তহবিল দ্বিগুণ করার ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টসকেএএ/