ধর্ম

নবিজির (সা.) চার উপদেশ

সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরবারে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। নবিজি (সা.) বললেন, মানুষের হাতে যা আছে, তা থেকে নিরাশ হয়ে যান। লোভ করবেন না; লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। নামাজ এমনভাবে আদায় করবেন, যেন আপনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। এমন কথা ও এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন, যার জন্য পরে ক্ষমা চাইতে হয়। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৯২৮)

Advertisement

এ হাদিসে নবিজি (সা.) যে চারটি উপদেশ দিয়েছেন:

১. মানুষের সম্পদে আশা বা লোভ রাখা যাবে না

নবিজি (সা.) বলেছেন, মানুষের হাতে যে সম্পদ আছে, তা নিয়ে আশা করো না। কার পকেটে কী আছে বা কে কত সম্পদশালী, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। এটি আমাদের অন্তরে অহেতুক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। আমাদের দৃষ্টি আল্লাহর রহমতের দিকে থাকতে হবে। তিনি যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

হঠাৎ কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে প্রথম কাজ হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। সালাতুল হাজত পড়ে তার কাছে প্রার্থনা করা। এরপর বৈধ উপায়ে উপার্জনের বা নিজের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করা। এমনটি মনে করা বা আশা রাখা উচিত নয় যে, কেউ এসে আমাকে সাহায্য করবে। অমুক ব্যক্তি এসে আমাকে উদ্ধার করবে। মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা বাদ দিতে হবে। আশা-ভরসা থাকতে হবে শুধু আল্লাহর কাছে, মানুষের কাছে নয়।

Advertisement

২. লোভ এড়িয়ে চলতে হবে

নবিজি (সা.) উপদেশ দিয়েছেন, লোভ করা যাবে না। বলেছেন, লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। কারণ লোভের ফলে মানুষ নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট হতে পারে না। আল্লাহ যা দিয়েছেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত। নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে আরও বেশি পাওয়ার লোভ করতে থাকলে মানুষ কখনও অভাবমুক্ত হতে পারে না। আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, অভাবমুক্তি ও প্রাচুর্য সম্পদের আধিক্যের কারণে হয় না, বরং প্রকৃত প্রাচুর্য হলো অন্তরের প্রাচুর্য। (সহিহ বুখারি: ৬৪৪৬, সহিহ মুসলিম: ১০৫১)

যদি অন্তরে শান্তি থাকে, তবে সামান্য সম্পদেও সুখী হওয়া যায়। কিন্তু লোভ করলে যতই সম্পদ থাকুক, তাতে তৃপ্তি আসে না। এমনকি দুই উপত্যকা সম্পদ পেলেও তৃতীয়টি চায়। অভাব থেকে বাঁচতে আমাদের লোভ কমিয়ে আনতে হবে। লোভ থেকে মুক্ত থাকলেই প্রকৃত সুখ ও শান্তির সন্ধান পাওয়া যায়।

৩. নামাজ পড়তে হবে জীবনের শেষ নামাজ হিসেবে নবিজি (সা.) এমনভাবে নামাজ আদায় করতে উপদেশ দিয়েছেন যেন এটি জীবনের শেষ নামাজ। এই নামাজ আদায় শেষ করেই আমি এই জীবন ছেড়ে আখেরাতে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য যাত্রা করবো। এই অনুভূতি নিয়ে নামাজ আদায় করলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং তা আমাদের অন্তরে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করবে।

Advertisement

দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া, কবরের জীবন ও আখেরাতের চিন্তা যে কোনো ইবাদতকে শুদ্ধ ও ইখলাসপূর্ণ করে তোলে। এ কারণে নবিজি বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা স্বাদ হরণকারী বিষয় অর্থাৎ মৃত্যুর আলোচনা বেশি বেশি কর। (সুনানে তিরমিজি: ২৩০৭)

৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যে কারণে পরে ক্ষমা চাইতে হয়

নবিজির (সা.) আরেকটি উপদেশ হলো, এমন কথা বলা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকুন যে জন্য পরে লজ্জিত হতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়। কোনো ভুল হয়ে গেলে অনুতপ্ত হওয়া, দুঃখ প্রকাশ করা ভালো গুণ। কিন্তু সতর্ক থাকা উচিত যেন এ রকম কোনো কথাই আমি না বলি, এমন কোনো কাজই না করি।

একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ অযথা কটুকথা বলা, অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে। যে কাজের কারণে পরে অনুতপ্ত হতে হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলে।

ওএফএফ/এএসএম