ফিচার

সান্তা ক্লজ আছেন বাস্তবেই, থাকেন কোথায় জানেন?

বড়দিন মানেই কেক, ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লজের উপহার। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ঘটা করে পালন করা হয় এই দিবস। পাশ্চাত্য দেশ সহ সব শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে ছোট-বড় রেস্তোরাঁ কিংবা ক্যাফে, শপিং মল সবই সেজে উঠেছে বড়দিনের জন্য। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়েছে বড়দিনের উৎসবের আমেজ।

Advertisement

বড়দিন নিয়ে থাকে নানা আয়োজন। আগের রাতে বাচ্চারা বাড়ির বাইরে বা জানালায় মোজা ঝুলিয়ে রেখে ঘুমাতে যায়। অনেকেই মনে করেন এই মোজার ভেতরেই রাতে সান্তা ক্লজ এসে উপহার রেখে যাবে। হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চেপে সান্তা ক্লজ আসবে। পিঠে লাল রঙের বড় থলি। তিনি নাকি বাড়ি গিয়ে ছোটদের উপহার দিয়ে আসবেন। এমন গল্প প্রচলিত আছে।

আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। ২৪ তারিখ রাত ১২ টা বাজলেই লাল সাদা পোশাকে ঝোলায় ভর্তি উপহার নিয়ে হাজির হোন সান্তা ক্লজ। জানেন কি? শুধু রূপকথার গল্পের চরিত্র নয় সত্যিই পৃথিবীতে আছেন সান্তা। তাহলে কোথায় থাকেন তিনি। কোথায় তার বাড়ি। এমন প্রশ্ন সবার মনেই রয়েছে।

যদি সত্যিই সান্তার দেখা পেতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে ফিনল্যান্ড। হ্যাঁ, সেখানেই থাকেন সান্তা। বড়দিনের আগের রাতে বরফে ঢাকা চরম শীতের দেশ থেকে স্লেজগাড়ি চড়ে লোকালয়ে আসে সান্তা ক্লজ।

Advertisement

খ্রিষ্টীয় ৩ শতকে সান্তা ক্লজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ওই সময় সান্তা হিসেবে নয়, সেন্ট নিকোলাস নামে এক বৃদ্ধ প্রত্যেক বাড়িতে হাজির হয়ে শিশুদের উপহার দিতেন। তুরস্কে জন্ম নেওয়া সেন্ট নিকোলাস প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। অসহায় মানুষদের যেমন তিনি সাহায্য করতেন, তেমনি শিশুদের কাছেও প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন সেসময়।

সান্তাকে নিয়ে কথিত রয়েছে আরও অনেক গল্প। এমন একটি কাহিনি হচ্ছে এই সেন্ট নিকোলাস ৩ বোনকে বিক্রি হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন। অর্থের জন্য ওই ৩ বোনকে যখন তার বাবা বিক্রি করতে যান, সেন্ট নিকোলাস গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। সেই থেকে এই সাদা দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি জনপ্রিয়তা লাভ করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে এই সেন্ট নিকোলাসই সান্তা ক্লজ হিসেবে পরিচিতি পান বলে জানা যায়।

আরও একটি কাহিনি অনুযায়ী, নর্থ পোলে সান্তার বাড়ি। নর্থপোলে স্ত্রী ক্লজকে নিয়ে তার বসবাস। ইউরোপের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও জনপ্রিয়তা লাভ করেন এই সান্তা। সান্তা ক্লজকে নিয়ে এমনই সব ভিন্ন ভিন্ন গল্প কথিত। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সান্তার জন্য খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করে থাকে। শুধু তাই নয়, সান্তা তার উপহারের ঝুলি থেকে তাদের মনের মতো জিনিস দিয়ে যাবেন বলেও বিশ্বাস করে ছোট ছোট মুখগুলো।

অনেকে বলেন সান্তা ক্লজ সুদূর উত্তর মেরুতে চিরতুষারাবৃত এক দেশের মানুষ। তবে সান্তার আসল বাড়ি ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড প্রদেশের কোরভাটুনটুরি পার্বত্য অঞ্চলে। সেখানে যেতে হলে আপনাকে পৌঁছাতে হবে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে। সেখান থেকে ছাড়ে ফিনিশ ডাবল ডেকার ট্রেন। তার নাম সান্তা ক্লজ এক্সপ্রেস। আর এই ট্রেনে একবার চড়ে বসতে পারলেই আপনি পৌঁছে যাবেন সান্তা ক্লজের বাড়িতে।

Advertisement

হ্যাঁ, ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েমিতে সত্যি সত্যিই বাড়ি রয়েছে সান্তার। কেবল বাড়ি নয়, সেখানে রয়েছে তার অফিস, নিজস্ব পোস্ট অফিস, এমনকি রেইন ডিয়ার অর্থাৎ বল্গা হরিণের ফার্মও। সান্তার বাড়ি সারাবছর বরফে মোড়া থাকে।

সান্তার এই বাড়ির উপর দিয়েই যে চলে গিয়েছে কাল্পনিক আর্কটিক লাইন বা উত্তর মেরু রেখা। এজন্য বছরে একদিন ২২ ডিসেম্বর, এখানে সূর্যের ঘুমই ভাঙে না। আবার ২১ জুন তারিখটিতে চব্বিশ ঘণ্টাই দেখা মেলে সুয্যিমামার।

শুধু সান্তার বাড়িই নয়, গোটা গ্রামের গাছপালা, মাঠ, রাস্তা, সবকিছুর উপরেই বিছিয়ে থাকে বরফের চাদর। সব মিলিয়ে যেন বড়দিনের কার্ডের ছবির মতোই সুন্দর এই গ্রাম। সান্তা ক্লজের নামেই এই গ্রামের নাম সান্তাক্লজ ভিলেজ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ছবির মতো গ্রামটি। কিছু বছর পর একে ফের সাজিয়ে তোলা হয়। ফার্স্ট লেডি ইলিনর রুজভেল্টের উদ্যোগে উত্তর মেরুতে একটি কেবিনও তৈরি করা হয়। তবে সান্তা ক্লজের বাড়ি হিসেবে যথাযথ স্বীকৃতি পেতে এই গ্রামের সময় লেগেছে আরও অনেক দিন।

তবে বড়দিনের প্রতীকই কিন্তু সান্তা। যিশুর জন্মের এই দিনটিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালন করা হয় বেশ জাঁকজমক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। প্রতি বছরই উজ্জ্বল লাল রঙের পোশাক পরে, মাথায় সাদা টুপিতে সাদা দাড়ির বুড়ো মানুষটা আসেন সবার মাঝে খুশি বিলিয়ে দিতে। খ্রিষ্টধর্মের মানুষের কাছে শিশুদের রক্ষাকর্তা হিসেবেই পরিচিত থাকবেন সান্তা। আরও পড়ুন

২০২৪ সালে শিশুদের করা বিস্ময়কর যত রেকর্ড জীবনের ১০০ বসন্ত পার, প্রেমের পর ঘর বাঁধলেন দম্পতি

সূত্র: দ্য টাইমস, আই নিউজ

কেএসকে/এমএস