খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি। ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার একদিন ছুটি নিলেই টানা চারদিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পাবেন অনেক চাকরিজীবীরা। একই সঙ্গে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় স্কুলগুলোতেও ছুটি চলছে। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে দেশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করছেন অনেকেই।
Advertisement
ছুটির এই প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন জেলা বান্দরবানে হোটেল রুম বুকিংয়ের হিড়িক পড়েছে। এরই মধ্যে ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান সদর এলাকার হোটেলগুলোতে শতকরা ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
তবে বান্দরবান সদরের ঠিক বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে পর্যটকদের আরেক পছন্দের স্থান থানচিতে। ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকায় পর্যটকশূন্য হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন থানচির পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। থানচিসহ বান্দরবানের আরও দুই উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়িতেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেখানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বান্দরবান সদরের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
২৩ দিনের জন্য বান্দরবান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বান্দরবান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় ২৩ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা দেখতে ভুলবেন না জনপ্রিয় যেসব স্পটব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন পর বান্দরবান সদর এলাকার ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের ভালো সাড়া পেয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেলের ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ফলে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে পর্যটন ব্যবসায়ী পাড়ায়।
অন্যদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভরা মৌসুমেও পর্যটকদের না পেয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে থানচিতে এর প্রভাব পড়েছে বেশি। এ অবস্থায় পর্যটন ব্যবসায় হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এসব এলাকার অনেক ব্যবসায়ী।
‘নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে এসব এলাকা ভ্রমণে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।’- জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। ক্রমান্বয়ে বান্দরবান সদর, আলীকদমও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। পরে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও ২০২৪ সালের ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ৬ নভেম্বর চারটি উপজেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। ফলে এই তিন উপজেলায় বিশেষ করে থানচিতে ভরা মৌসুমে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা থাকলেও চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান সদর এলাকার হোটেল হিলভিউয়ের ব্যবস্থাপক মো. পারভেজ জানান, এই মৌসুমে পর্যটকদের ভালো সাড়া পেয়েছেন তারা। ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং দিয়েছেন ভ্রমণপ্রত্যাশীরা।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার বড় পাথর এলাকা/জাগো নিউজ
হোটেল হিল্টনের ব্যবস্থাপক এস এম আক্কাস উদ্দীন সিদ্দিকী জানান, ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর তাদের হোটেলেরও ৮০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং করে রেখেছেন পর্যটকরা।
হোটেল গ্র্যান্ড ভ্যালির ব্যবস্থাপক মো. সুমন জানান, ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর তাদের হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে আরও পর্যটকের সাড়া পেয়ে শতভাগ কক্ষ বুকিং হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। এ নিয়ে আগের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সুমন।
আরও পড়ুন
একদিনেই বান্দরবানের ৪ স্পট ভ্রমণ জৌলুস ফিরছে পর্যটনের স্বর্গ বান্দরবানে ধুঁকছে পর্যটন ব্যবসা, বন্ধের আশঙ্কা সব হোটেল-রেস্তোরাঁবান্দরবানের থানচি উপজেলার বড় পাথর এলাকা/জাগো নিউজ
অপরদিকে থানচিতে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। থানচির রেমাক্রী এলাকার ম্যাম্যায়ি মারমা ও এসাইয়ি মারমা জানায়, থানচি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তারা। স্কুল ছুটির কারণে মা-বাবাকে ব্যবসায় সহযোগিতা করে। এই মৌসুমে তাদের এলাকায় পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা। অথচ নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটক নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় সংসার চালানোর পাশাপাশি তাদের স্কুলের খরচ জোগাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছর ধরে ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন থানচির ব্যবসায়ীরা। হোটেল, রেস্তোরাঁ, বোট, গাড়ি ও গাইড মিলে গত এক বছরে অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই পর্যটন ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। জীবিকার তাগিদে অনেকেই ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন।’ - থানচি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল্লাহ
থানচি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বান্দরবানে যেসব পর্যটন স্পট আছে তার মধ্যে থানচির তমা তুঙ্গী, তিন্দু, রেমাক্রীর বড় পাথর, আমিয়াখুম ও নাফাখুম অন্যতম। এই স্পটগুলোতে ভিড় করতেন অসংখ্য পর্যটক। উপজেলার আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার বড় পাথর এলাকা/জাগো নিউজ
কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছর ধরে ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন থানচির ব্যবসায়ীরা। হোটেল, রেস্তোরাঁ, বোট, গাড়ি ও গাইড মিলে গত এক বছরে অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই পর্যটন ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। জীবিকার তাগিদে অনেকেই ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও জানান শহিদুল্লাহ।
আরও পড়ুন
বান্দরবান ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যেসব স্পট বান্দরবানের কোথায় কী দেখবেন শীত মৌসুমে বান্দরবানে পর্যটকদের ভিড়বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বান্দরবান সদর এলাকায় ৭০টি আবাসিক হোটেলে ছয় হাজার পর্যটকের ধারণক্ষমতা। পর্যটকদের ভালো সাড়া পাওয়ায় ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব হোটেল মিলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আগত পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা দিতে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে এসব এলাকা ভ্রমণে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এনএসি/ইএ/এমএমএআর/এমএস