জাতীয়

২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচি

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন খসড়া সুপারিশের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।

Advertisement

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পরিষদের এক মতবিনিময় সভায় এ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার সেগুনবাগিচার পূর্ত ভবনে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের নেতাদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ২৫ টি ক্যাডারের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ ডিসেম্বর (সোমবার) প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে বিবৃতি দেবে। ২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা সব অফিসে কলমবিরতি পালন করা হবে। ২৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসে স্ব-স্ব কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব ঘিরে উত্তাল প্রশাসন উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা কমানোর প্রস্তাবে ৬৪ ডিসির প্রতিবাদ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে হট্টগোল পরীক্ষা ছাড়া উপসচিব ও যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি নয়

এছাড়া যেসব বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি, অতি দ্রুত সেখানে সমাবেশ আয়োজন এবং জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো হবে। ৪ জানুয়ারি (শনিবার) ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া নেওয়া খসড়া সুপারিশের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, কমিশন বৈষম্যমূলকভাবে উপসচিব পুলে একটি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সুপারিশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করায় সিভিল সার্ভিসের অন্য ২৫টি ক্যাডারের সব সদস্যের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের এ সব সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে একটি গ্রুপ এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচার শুরু করেছে। সিনিয়র সার্ভিস পুল বা উপসচিব পুলের পদগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের নয়। ‘সার্ভিস অ্যাক্ট, ১৯৭৫’ অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার। এছাড়া ২০১৮ এর নির্বাচনের পর সার্ভিস অ্যাক্ট বাতিল করে ২০২৪ এর নির্বাচনের পর এসব পদ নিজেদের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডার, যা মেধাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে মারাত্মক অন্তরায়।

বক্তারা আরও বলেন, সব সেক্টরে একটি ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেট, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বৈষম্য রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষ প্রকৃত জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জনবান্ধব সরকারের পরিবর্তে দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকার।

Advertisement

কমিশনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করতে চাওয়া জনমনে নতুন সন্দেহের উদ্রেক করেছে। কমিশনের এ সব সিদ্ধান্ত সিভিল সার্ভিসের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি বলে জোর দাবি করেন বক্তারা। 

মতবিনিময় সভায় বক্তারা আরও বলেন, এছাড়া সম্প্রতি জনপ্রশাসন সচিব মিডিয়ার সামনে প্রশাসন ক্যাডারের বঞ্চিত সদস্যদের ভূতাপেক্ষভাবে গ্রেড-১ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত সদস্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। অথচ অন্যান্য ক্যাডারকে গ্রেড-৪ বা গ্রেড-৩ এর মধ্যে তারা আটকে রেখেছেন তারা।

আরএমএম/ইএ