দেশজুড়ে

‘চর বিজয়’ হয়ে গেলো ‘ভিক্টোরি আইল্যান্ড’, ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া

পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা নতুন চর ‘চর বিজয়’ এর নাম পরিবর্তন হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের উদ্যোগে চরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির যে সাইনবোর্ড লাগানো হয় তাতে চরটিকে ‘ভিক্টোরি আইল্যান্ড’ বলা হয়েছে।

তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দাবি করছেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কৌশলগত কারণে চর বিজয়কে বাংলা থেকে ইংরেজি করা হয়েছে। আর সরকারের পক্ষে এই চরের মালিক জেলা কালেক্টরেট হিসেবে জেলা প্রশাসক এ বিষয় কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গঙ্গামতী থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জেগে উঠে চর। এর আয়তন আনুমানিক ৫ হাজার একর। লাল কাঁকড়া আর হাজারো অতিথি পাখির বিচরণে আকাশ আর চর মিলে একাকার হয়ে থাকে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’। যা স্থানীয়দের কাছে ‘হাইরের চর’ নামেও পরিচিত।

Advertisement

বছরের ৬ মাস জেগে থাকে এই চর। মূলত এটি জেলেদের অস্থায়ী আবাসস্থল। চর বিজয়ের চারপাশে জেলেরা মাছ শিকার করেন। তারা তিন মাসের জন্য চরে অস্থায়ী আবাস তৈরি করে মাছের শুঁটকি প্রস্তুত ও বিক্রি করেন। কুয়াকাটা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় এই মনোমুগ্ধকর চরে পৌঁছানো যায়।

উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, চর বিজয় বাংলাদেশের অধিভুক্ত বঙ্গোপসাগরের তট থেকে বিচ্ছিন্ন একটি ছোট দ্বীপ। স্থানীয় জেলেদের কাছে হাইরের চর নামে পরিচিত। আয়তনে প্রায় ৫ হাজার একর যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে সমুদ্রের গভীরে এর অবস্থান। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্থানীয় জেলা প্রশাসক দ্বীপটির মালিকানা ঘোষণা করে এবং সরকারের নির্দেশে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে সাগরে ভ্রমণরত কয়েকজন উৎসাহী পর্যটকের নজরে আসে এবং তাদের উৎসাহে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র দ্বীপটি পরিদর্শনে যান। তখন এ দ্বীপটির নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’।

উপকূলীয় এলাকায় পর্যটন ও পরিবেশ প্রতিবেশ নিয়ে কাজ করা গণমাধ্যম কর্মী আরিফ রহমান ফেসবুকে লেখেন, কি জন্য ব্র্যান্ডিং করেছিলাম চর বিজয়কে? আমাদের জন্য না দেশের জন্য, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেলাম দেশের পর্যটন খাতের জন্য। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে অবহেলিত এক একটি জায়গাকে ব্র্যান্ডিং করে বিশ্বের বুকে পরিচিত করলাম। এর মানে না আমরা দেশের জন্য কিছু করি না, দেশ আমাদের যা দিয়েছে, এর ঋণ হিসেবে আমরা কাজ করে যাই।

তিনি আরও লেখেন, কিছু আমলারা অল্প কয়েক দিনের জন্য আমাদের এলাকায় দায়িত্ব থাকা অবস্থায় অনেক কিছু পরিবর্তন করতে চান, এটা ঠিক নয়। এই কুচক্র মহলকে আমরা দেশের দায়িত্ব দেই নাই। আমরা যদি এক হয়ে থাকি, আসুন চর বিজয়ের নাম পরিবর্তন করতে দেওয়া যাবে না।

Advertisement

কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার প্রেসিডেন্ট রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, সম্প্রতি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের উদ্যোগে তিন প্রজাতির ৮ শতাধিক গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্পট চর বিজয়ে। যা প্রশংসনীয় কাজ। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি, কলাপাড়া প্রেস ক্লাব সভাপতিসহ পর্যটন কর্মী ও সংবাদকর্মীরা। কর্মসূচির সাইনবোর্ডে ‘ভিক্টোরি আইল্যান্ড’ দেখে অনেকেই ভাবছেন এটা আবার নতুন কোনো চর জেগেছে কি না। পরবর্তীতে স্থানীয় ও পর্যটকরা চর বিজয়ই ‘ভিক্টোরি আইল্যান্ড'’ নিশ্চিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ও মন্তব্য করছেন এমনটা চোখে পড়েছে।

তিনি আরও লেখেন, জানি না এই নাম পরিবর্তনে সরকারি কোনো নির্দেশনা আসছে কি না। যদি এসেও থাকে তবুও বলবো নামটি তৎকালীন আওয়ামী সরকার বা তাদের দলের কেউ রাখেননি। আমার জানামতে স্থানীয় কয়েকজন পর্যটন ব্যবসায়ী, মসজিদের খতিব ও কয়েকজন পর্যটক বিজয়ের মাসে এই নামটি রাখেন। যারা কেউই তখন আওয়ামী লীগে জড়িত ছিলেন না। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মন্তব্য হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কুয়াকাটার স্বার্থে ও পর্যটকদের জ্ঞাতার্থে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা সহকারী কমিশনার একটি বিবৃতি দিলে সবার কাছে পরিষ্কার হতো। সবার জন্য শুভ কামনা।

একই ভাবে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চর বিজয়ের ব্রান্ডিং নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক হোসাইন আমির।

তিনি লেখেন, সাগর কন্যা কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষণ ‘চর বিজয়’। ২০১৭ সালে ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে ‘চর বিজয়’ নামেই পরিচিতি পেয়ে থাকে। বর্তমানে এই নামটি এক শ্রেণির মানুষ পরিবর্তন করার নানা পাঁয়তারা করছে, যেটা কুয়াকাটা পর্যটনের জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া দীর্ঘ ৮ বছরের পরিচিত একটা নাম পরিবর্তন করে, নতুন একটি নাম দিলে সেটা সারাদেশের পর্যটকদের সঙ্গে পরিচয় করাতে আরও এক যুগ চলে যাবে।

তিনি আরও লেখেন, যারা ইংরেজিতে এই নামের প্রস্তাব করছেন, তাদের আগে সেই নামের অর্থ জানতে অনুরোধ করছি। আরও জানা দরকার এটা চর নাকি দ্বীপ? চর হচ্ছে পলিমাটি ও কাদাবেষ্টিত। অপরদিকে, দ্বীপ হচ্ছে বালু ও পাথরের সৈকত। তাই আবেগে যা খুশি তাই করার আগে আবারও ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

তবে এসব বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এটি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের একটি কর্মসূচি ছিল। মূলত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কৌশলগত কারণে চর বিজয়ের নাম বাংলা থেকে ইংরেজি করা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।

আব্দুস সালাম আরিফ/জেডএইচ/জেআইএম