দেশজুড়ে

ময়মনসিংহে কুকুরের জন্য বিশেষ ঘর, থাকছে খাবার

কুকুরের কোনো ঘর নেই। দিন শেষে রাতে আরামে থাকতে একটু আশ্রয়ের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটে বেড়ায়। কোথাও একটু ঠাঁই না পেয়ে রাস্তার পাশে কিংবা নিরিবিলি স্থানে ঘুমিয়ে পড়ে। এতে বছরের বেশিরভাগ সময় কষ্টে থাকলেও শীতকালে সীমাহীন কষ্টে ভুগতে হয়। কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থায় ঘুমাতে দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় কুকুর ছানাগুলো।

Advertisement

এ অবস্থায় ময়মনসিংহে অবলা প্রাণীগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে ‘পরম্পরা’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠন। তাদের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে কুকুরের জন্য ঘর স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে চারটি ঘর বসানো হয়েছে। এসময় নগরীর অতুল চক্রবর্তী রোডে নুরানী জর্দা কারখানার সামনে কুকুরের জন্য বানানো ঘর বসানো কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অ্যাথলেট ও সাবেক দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন। তিনি নিজেও প্রাণিপ্রেমী। কুকুরের ঘর বসানোর সময় নিজের ব্যাগ থেকে বিস্কুট বের করে কুকুরকে খেতে দেন।

এছাড়া নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকা, বিদ্যাময়ী স্কুল এলাকা ও আমলাপাড়া এলাকায় কুকুরের জন্য ঘর স্থাপন করা হয়েছে। ‘পরম্পরা’ সংগঠনের অর্থায়নে ঘরগুলো করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে রাখা হয়েছে খাবার। ঘরের সামনে লেখে রাখা হয়েছে—‘অরণ্যচারী মানুষের প্রথম বন্ধু কুকুর। বন্ধুর যত্ন নিন। তাকে ভালোভাবে থাকতে দিন।’

Advertisement

উদ্যোক্তারা জানান, রাতে শহরের স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, বাসাবাড়ি- সবকিছুই এখন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে কারও আঙিনায় কুকুর ঢুকতে পারে না। রাত পাহারা দেয় কুকুর। এরমধ্যে তারাও একটু শান্তিতে ঘুমোতে চায়। কিন্তু আশ্রয় না পাওয়ায় শান্তিতে ঘুমোতে পারে না। এরমধ্যে যেসব কুকুর বাচ্চা প্রসব করবে সেগুলোর কষ্ট সীমাহীন। বাচ্চাগুলো মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। এদিকে শুরু হয়েছে শীত। এসব দিক চিন্তা করে মানবিক কারণে ঘর স্থাপনের এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যাময়ী স্কুল এলাকার বাসিন্দা নাদিম পারভেজ খান বলেন, ‘অনেক কুকুর ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে ঘোরাফেরা করে। রাত হলে আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু পায় না। যারা কুকুরের জন্য ঘর স্থাপন করেছেন তারা মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।’

সাবেক দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘এবারই কেউ কুকুরের জন্য আবাসনের চিন্তা করল। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। কুকুরকে নিয়ে এভাবে আসলে কেউ এভাবে চিন্তা করে না। ঘরগুলোতে কুকুরগুলো শান্তিতে থাকুন, ভালো থাকুক।’

পরম্পরা সাহিত্য সংগঠনের সমন্বয়ক শামীম আশরাফ। তিনি পেশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। ময়মনসিংহ শহরে ‘গ্রাফিটি’ নামে তার একটি ছাপাখানা রয়েছে। অনেক বছর ধরেই মানবিক বিভিন্ন কাজ করে প্রশংসা কুরিয়েছেন। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকেন সোচ্চার। এবার কুকুরের জন্য ঘর তৈরি করেও মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন কবি শামীম আশরাফ।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম আশরাফ বলেন, কুকুর আমাদের পরম বন্ধু, বন্ধুর জন্য কিছু করা উচিত। সেই চিন্তা থেকে এসব আশ্রয় ঘর স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সুযোগ থাকলে কুকুরের ঘরে কেউ কিছু খাবার ও পানি রেখে আসতে পারেন। যার যার দিক থেকে ঘরগুলোর দিকে নজর রাখলে ঘরগুলো টিকে থাকবে বহুদিন। কুকুরগুলো ভালো থাকলে আমাদের কাছেও ভালো লাগবে।

এসআর/এএসএম