ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী বলেছেন, আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই, আমরা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এই বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই এবং সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে চাই।
Advertisement
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) খিলক্ষেত থানা এলাকার নিকুঞ্জ-২ কল্যাণ সমিতি মাঠে পুলিশ, ছাত্র-জনতা ও নাগরিকদের সমন্বয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ আইন ও বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি সংস্থা। আমরা কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নই। আমরা কি করতে পারি, না পারি, আমাদের সমস্ত কার্যকলাপ জবাবদিহিতার মধ্যেই রয়েছে। যখন আমরা পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ করি তখন শপথ নিই যে, আমরা জনগণের জন্য কাজ করব। ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানাতেই আমরা যাচ্ছি। নাগরিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। আপনাদের কাছ থেকে আমরা মতামত, পরামর্শ নিচ্ছি যেন সামনের দিনগুলোতে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে তার একটি রূপরেখা দাঁড় করানো যায়। এদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, এদেশের মানুষ দেশপ্রেমিক। ৫ আগস্টের পর জনগণ পুলিশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা সেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। আমরা পুলিশ, আপনাদেরই অংশ, আমরা যখন পরিবারের কাছে যাই তখন পরিবারের তথা সমাজের অংশ হয়ে যাই। কাজেই পুলিশ যখন কাজ করবে তখন মানবিক দৃষ্টি নিয়ে কাজ করবে, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে, আপনাদের সহায়তা নিয়ে কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, এই দেশ আমাদের সবার, আমরা যে সুন্দর আগামী বিনির্মাণের কথা বলছি তা যেন আমাদের বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং আমাদের মেধা ও মননে যেন তা আমরা ধারণ করতে পারি সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। আসুন সবাই একসঙ্গে কাজ করি। এই দেশ আমাদের, এই মাটি আমাদের, আমরা এই মাটির সন্তান। কাজেই এই দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার, আমার, আমাদের সবার।
Advertisement
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, শুধু পুলিশের কাজ দ্বারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জনগণের সহায়তা ছাড়া এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই খিলক্ষেত এলাকার বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা আমরা শুনেছি- তার মধ্যে মাদক, ফুটপাতের হকার এবং রাস্তা দখল করে ভ্যান রাখার বিষয় উঠে এসেছে। বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এবং আমাদের ট্রাফিক বিভাগ এ ব্যাপারে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কিছু মানবিক বিষয় আছে তবে জনগণের অসুবিধা করে যেন কিছু না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্কভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মাদক সমস্যার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিরোধ সবার আগে গড়ে তুলতে হবে। আমরা যেন সচেতন হই, আমরা যেন অনুধাবন করি যে মাদক আমাদের ধ্বংসের একেবারে কিনারায় নিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
পুলিশকে জনগণের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা শুনতে হবেতিনি আরও বলেন, আপনাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি দৃষ্টি রাখুন, আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে- এই ব্যাপারগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করুন। আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে আপনারা যখনই সহযোগিতা চাইবেন আপনাদের সমস্যাগুলোর ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করব।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা ও খিলক্ষেত থানা এলাকার নাগরিকদের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কাছে তাদের বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
Advertisement
খিলক্ষেত থানা এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক ইফতেখার বলেন, পুলিশ যে জনগণের বন্ধু তা ৫ আগস্টের পর ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছি। তবে সমাজে শুধু নেতৃত্ব নয়, নীতিরও পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।
সভায় উপস্থিত আব্দুর রব বলেন, ভাবতে ভালো লাগছে যে, প্রশাসন নিজেদের জড়তা কাটিয়ে আজ জনতার সাথে এই মতবিনিময় সভার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এমন একটি স্বচ্ছ রাষ্ট্রব্যবস্থা চাই, যেখানে কোন চাঁদাবাজি ও হয়রানি থাকবে না।
সভায় উপস্থিত সামির ফাইয়াজ বলেন, দায়িত্ব শুধু পুলিশের একার নয়। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু কর্তব্য আছে। আমাদের সচেতন হতে হবে, মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমান পুলিশ যদি জনতার পুলিশ হয়, তাহলে আমাদের আস্থার জায়গাটা আরও শক্তিশালী হবে।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় গুলশান বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
টিটি/এমআরএম