মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ কারণে বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড ও অর্থদণ্ড থেকে অ্যাবেটেড (বাদ) দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
মতিউর রহমান নিজামী ছাড়াও মৃত্যুবরণ করায় আব্দুর রহিমের আপিল অ্যাবেটেড (বাদ) হয়ে গেছে।
ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি নিয়ে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর মাওলানা নিজামীর ছেলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, মাওলানা নিজামী যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন, আজকের রায়ে আবারও তা প্রমাণ হলো।
Advertisement
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান ও মোহাম্মদ শিশির মনির। এছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম।
রায় ঘোষণার পর লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। তাদের ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে আজ রায় হয়েছে। এ রায়ে খালাস পেয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে চারজন মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে খালাস পেয়েছেন। পলাতক নুরুল আমিনও খালাস পেয়েছেন।
এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করায় মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুর রহিমের আপিল অ্যাবেটেড (বাদ) হয়ে গেছে। বাকি ছয়জনকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ভারত চলে যাওয়া পরেশ বড়ুয়াকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। ১৪ জনের মধ্যে মোট সাতজন খালাস, ছয়জন ১০ বছর এবং একজন যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা থেকে খালাস পেলেন বাবরনিজাম হাজারী-দুর্জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলালুৎফুজ্জামান বাবরের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, দ্বিতীয় তদন্তের ভিত্তিতে তাকে প্রধান আসামি করা হয়। তাকে আজ খালাস দিয়েছেন এ কথা বলে যে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিকটিম। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টি তথ্য-প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি।
Advertisement
জামায়াতের সাবেক আমিরের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, আমরা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ করায় মামলাটা অ্যাবেট হয়ে গেছে। কিন্তু যে জরিমানা ছিল সেটা থেকে অন মেরিটে খালাস করে দিয়েছেন। ফলে এ মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন।
শিশির মনির জানান, এ মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুবরণ করায় অ্যাবেট করে খালাস দেওয়া হয়), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর (খালাস) এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ (যাবজ্জীবন- বর্তমানে ভারতে) এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (খালাস), এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম (মৃত্যুবরণ করায় অ্যাবেট করে খালাস), ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদ (১০ বছর), এনএসআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন (১০ বছর), এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান (১০ বছর), রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন উদ্দিন তালুকদার (খালাস), সিইউএফএল’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক (খালাস), সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিন (খালাস), চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান (১০ বছর), অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ (১০ বছর) ও ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান (১০ বছর)।
এর আগে হাইকোর্টে গত ৬ নভেম্বর এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক সংক্রান্ত দুই মামলার মধ্যে চোরাচালান মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমানের আদালত।
অস্ত্র আইনে দায়ের করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন একই আসামিরা। এছাড়া অস্ত্র আটক মামলার অপর ধারায় সাত বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।
এরপর বিধি অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এছাড়া কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন।
এফএইচ/কেএসআর/জেআইএম