আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া করতেন,
Advertisement
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْأَرْبَعِ: مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دُعَاءٍ لَا يُسْمَعُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল আরবাই; মিন ইলমিন লা ইয়ানফাউ মিন কলবিন লা ইয়াখশাউ ওয়া মিন নাফসিন লা তাশবাউ ওয়া মিন দুআয়িন লা ইউসমাউ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই চার বিষয় থেকে; অনুপকারী জ্ঞান থেকে, ভীতিহীন অন্তর থেকে, অতৃপ্ত প্রবৃত্তি থেকে এবং এমন দোয়া থেকে যা শোনা হয় না। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪৮)
Advertisement
এ দোয়াটিতে আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রথমেই অনুপকারী জ্ঞান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। যে জ্ঞান মানুষকে আল্লাহর ব্যাপারে সচেতন করে, আল্লাহভীরু ও বিনয়ী বানায়, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে এবং ভালো কাজ করতে সাহায্য করে তা উপকারী জ্ঞান। যে জ্ঞান মানুষকে সুপথের সন্ধান দিতে পারে না, নেক বানাতে পারে না, উল্টো অহংকারী বানায়, তা অনুপকারী জ্ঞান।
উপকারী জ্ঞান দুনিয়াতে যেমন সম্মান বৃদ্ধির কারণ হয়, আল্লাহর কাছেও মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির কারণ হয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। (সুরা মুজাদালা: ১১)
আর অনুপকারী জ্ঞান গুনাহের দায় ও শাস্তি বৃদ্ধি করে। অজ্ঞ ব্যক্তির অনেক গুনাহ তার অজ্ঞতার কারণে আল্লাহ তাআলা হয়ত মাফ করে দিতে পারেন, কিন্তু জেনে বুঝে যে গুনাহ করে, তার ক্ষমা পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া সম্পদ অর্জন করা, মানুষের কাছে জ্ঞানী হিসেবে সম্মান লাভ করা, সাধারণ মানুষের সামনে বড়াই করা বা আলেমদের সাথে তর্কে বিজয়ী হওয়ার নিয়তে জ্ঞান অর্জন করলে সে জন্য শাস্তির সতর্কবাণী এসেছে হাদিসে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া-বিতর্ক করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়োত্ব প্রকাশ করার জন্য (ধর্মীয়) জ্ঞান শিক্ষা করো না। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৫৩)
এরপর নবিজি (সা.) আশ্রয় চেয়েছেন ভীতিহীন অন্তর থেকে। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় নেই এমন অন্তর থেকে। একজন মুমিনের অন্তরে আল্লাহর রহমতের আশা থাকা যেমন অপরিহার্য, আল্লাহর ভয় থাকাও অপরিহার্য। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ একইসাথে তার রহমত ও ক্ষমার জন্য আশাবাদী হতে বলেছেন, আবার তাকে ভয় করারও নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ তার উত্তম বান্দাদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত। (সুরা আম্বিয়া: ৯০)
Advertisement
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা আলে ইমরান: ১৭৫)
এরপর নবিজি অতৃপ্ত প্রবৃত্তি বা আত্মা থেকেও আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে দুনিয়ার মোহ, দুনিয়ায় সম্পদ ও সম্মান লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকে। মুমিনের কর্তব্য হলো এই আকাঙ্ক্ষাকে সীমিত রাখা। আখেরাতকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কাবরসমূহে উপস্থিত হও। এটা সংগত নয়, তোমরা শীঘ্রই এটা জানতে পারবে। তারপর কখনো নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সাবধান! তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহাচ্ছন্ন হতেনা। তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই। আবার বলি, তোমরাতো ওটা চাক্ষুষই দেখবে। এরপর সেদিন অবশ্যই নেয়ামত সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। (সুরা তাকাসুর ১-৮)
এরপর নবিজি (সা.) এমন দোয়া থেকেও আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চেয়েছেন যে দোয়া শোনা হয় না। মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে যে কল্যাণকর দোয়া করে, তা সাধারণত ব্যর্থ হয় না। দোয়ার বদলা আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দান করেন। তবে বিভিন্ন সময় দোয়ার প্রতিদান বিভিন্ন রকম হয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি এমন দোয়া করে যে দোয়াতে কোনো পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় নেই, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন; হয়ত যে দোয়া সে করেছে তা ওইভাবেই কবুল করেন, তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন অথবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যত দোয়াই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (বুখারি ফিল আদাবিল মুফরাদ)
তবে জুলুম, হারাম উপার্জন ইত্যাদি কিছু গুনাহের কারণে দোয়া বিফল হতে পারে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে আলুথালু ধূলিমলিন বেশে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে দীর্ঘ করে তুলে দোয়া করে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় পোশাক হারাম এবং হারাম খেয়েই তার শরীর গঠিত হয়েছে। তাই তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে? (সহিহ মুসলিম: ২৩৯৩)
ওএফএফ/জেআইএম