সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপন কারাগারে গুম-নির্যাতন-খুনের নিউক্লিয়াস ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে এ কথা বলেন তিনি।
এদিন জুলাই-আগস্ট অভুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতার আওয়ামী লীগের সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে অগ্রগতি বা তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করার জন্যে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে আবারো ১৬ জনকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে মঙ্গলবার মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তের অগ্রগতি দাখিলের পর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চিফ প্রসিকিউটরের সময় আবেদন মঞ্জুর করে এই আদেশ দেন আদালত। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
Advertisement
ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আদেশের পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজ ট্রাইব্যুনালে অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি। ১৬ বছর ধরে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষকে গোপন কারাগারে নিষ্ঠুরতম পন্থায় বছরের পর বছর আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশকে সিমেন্টের বস্তার সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর এসবের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী এবং অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার।
আরও পড়ুন:
ওবায়দুল কাদের কীভাবে পালালেন ব্যাখ্যা চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল ট্রাইব্যুনালে হাজির আমু-আনিসুল-শাজাহান-ইনুসহ ১৬ আসামিতাজুল ইসলাম বলেন, ‘তদানীন্তন সময়ের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের স্বীকারোক্তিতেও বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ সমস্ত অপরাধের অংশগুলো তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে সেগুলো ট্রাইব্যুনালে দিয়েছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই অপরাধগুলোকে আমলে নিয়েছেন।’
Advertisement
‘এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা আরো বিস্তারিত প্রতিবেদন দেব। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং গুম সংক্রান্ত যে অপরাধ সেগুলো সব মিলিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করতে সময়ের দরকার। আমরা সময় চেয়েছি। আদালত আমাদের দুই মাস সময় দিয়েছেন। আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া পৃথিবীর অন্য মামলার চেয়ে ব্যতিক্রম। তদন্ত শেষ হতে কতদিন সময় লাগবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব। এটার গভীরতা ও মাত্রা অনেক বেশি। কত দিনের মধ্যে এর তদন্ত শেষ হবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলার মতো অবস্থা এখনো আসেনি। আমরা চেষ্টা করব দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারগুলোকে শেষ করার অথবা বিচার প্রক্রিয়ার জন্য মামলা প্রস্তুত করার। তবে আমরা যত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে সেগুলো ব্যবহার করছি। মামলাগুলো কেমন করে বিচারের জন্য প্রস্তুত করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করছি।’
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৪ জনকে উপস্থিত করার কথা ছিল ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত না থাকায় ওইদিন ১৩ জনকে হাজির করা হয়েছিল। ওই দিন গ্রেফতারকৃতদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। এর পর অপর দুই মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু ও অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলামকে উপস্থিত করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা ১৬ আসামি হচ্ছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম।
এফএইচ/এমএমএআর/এমএস